আগামীকাল ঐতিহাসিক ঝাণ্ডা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে খাজা এনায়েতপুরী (রহ:) এঁর ১০৮তম ওরছ

ভারতীয় উপমহাদেশের অবিসংবাদিত ইসলাম প্রচারক হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী খাজা মুহাম্মদ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী (রহ:) এঁর ১০৮তম মহাপবিত্র ওরছ শরীফ আগামীকাল ১ মার্চ বুধবার হতে বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল, এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে শুরু হচ্ছে। তিনদিন ব্যাপী ওরছ শরীফ আগামীকাল বাদ জোহর ঐতিহাসিক ঝাণ্ডা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে। ৩রা মার্চ, শুক্রবার সকালে মুনাজাত।

আগামীকাল ১লা মার্চ বুধবার থেকে সিরাজগঞ্জের বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল, এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে শুরু হতে যাচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক স্মরণীয় ধর্মীয় উৎসব; খাজাবাবা শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ:) এঁর ১০৮তম মহাপবিত্র ওরছ মুবারক। এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ওরছ শরীফের আয়োজন বর্ণাঢ্য করতে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের আশপাশের ২০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও এলাকাজুড়ে করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা।

বিগত বছরগুলো থেকে এবার কয়েকগুণ বেশি লোকের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি মেহমান ও ভক্তবৃন্দসহ আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ লোকের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে অত্র এলাকার ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। আশপাশের কয়েকটি গ্রাম আলো ঝলমল করছে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি রাখা হয়েছে দরবার শরীফের নিজস্ব আনসার বাহিনী। আগত সকলের থাকা- খাওয়া, ইবাদত, জিকির, তালীমের উপযুক্ত পরিবেশের সাথে প্রস্তুত প্রচার, মিডিয়া, স্যানিটেশন এবং এমন খেদমত সম্পৃক্ত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অসংখ্য গ্রুপ।

জানা যায়, খাজা ইউনূস আলী এনায়েতপুরী (র:)’র পূর্বপুরুষ ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারের জন্য ইয়েমেন থেকে বাংলায় আগমন করেন। খাজা মুহাম্মাদ ইউনূস আলী এনায়েতপুরী (র:) ১৯১৬ সালে নিজ পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী (রঃ)’র নির্দেশে ধর্মীয় আলোচনা, জিকির, শরিয়ত ও তরিকতের তালীম প্রদানের জন্য ওরছ মোবারক শুরু করেন। ধীরে-ধীরে অগনিত ভক্তদের আগমনে তা মহাসমাবেশে রূপ নেয়। এরপর হতে দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষের আহবানে সম্মিলিত উদ্যোগ, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় প্রতি বছরই দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের অংশগ্রহণে ধর্মীয় মহাসমাবেশ ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। খাজা মুহাম্মাদ ইউনূস আলী এনায়েতপুরী (র:)’র সংস্পর্শে এসে বাংলা ভারতের ৫৬ লক্ষ মানুষ সত্য ও শান্তির ছায়ায় আসে এবং সহস্রাধিক পীর আউলিয়া খেলাফত প্রাপ্ত হন। যাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহের লালকুঠি পাক দরবার শরীফের হযরত মাওলানা খাজা মোহাম্মদ ছাইফুদ্দীন শম্ভুগঞ্জী (র:), ফরিদপুরের হযরত মাওলানা হাসমত উল্লাহ-আটরশির পীর, হযরত মাওলানা সুলতান আহম্মেদ, চন্দ্রপাড়ার পীর, হযরত মাওলানা মকিম উদ্দিন, প্যারাডাইজ পাড়া, টাঙ্গাইল, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, মাতুয়াইল, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারাও একই ভাবে ইসলামের বাণী ও খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ)’র আদর্শ ও সুফিবাদের প্রচার করছেন।

আগামী ৩ মার্চ মোতাবেক বাংলা ১৮ ফাল্গুন, শুক্রবার সকাল ৯টায় বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করবেন দরবার শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানিশীন হযরত মাওলানা খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া (মা:জি:আ:)।

ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় এই মহাসম্মেলনকে ঘিরে আগ্রহ যমুনা পাড়ের টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলাবাসীর। ঈদের পরেই এলাকায় স্থান পাওয়া এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সপ্তাহব্যাপী আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সবার মাঝেই উৎসাহ-উদ্দীপনা। এ উপলক্ষে এনায়েতপুর থানার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। ইতিমধ্যেই প্রতিটি বাড়িতে ঝি-বেটি, আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করা হয়েছে। কেউ ওরছ শরীফের আগের দিন কেউবা আবার শুরুর দিন এলাকার স্বজনদের বাড়িতে আসবেন। মূলত এসব দাওয়াত প্রাপ্তরা অন্য থানা ও জেলার হয়ে থাকেন। ওরছ শরীফে মাজার জিয়ারত, ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি তাদের আতিথিয়তায় টানা কয়েকদিন বাড়িতে থাকে খেজুরের রসের গুড়ের পিঠা-পুলি, পায়েশসহ বাহারী খাবারের আয়োজন। এছাড়া দরবারের সুস্বাদু তবারকের স্বাদ নেয়াও এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। ওরছ শরীফের এই আয়োজন বহুকাল ধরে দৃঢ় করে রাখছে মুসলিম-হিন্দু সকল মানুষের অনন্য সমপ্রীতির বন্ধন। এ ব্যাপারে এনায়েতপুর গ্রামের প্রবীণ সমাজসেবক আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সোলেমান হোসেন মাস্টার ও খোকশাবাড়ী গ্রামের কালীপদ সরকার জানান, শত বছরের আমাদের প্রাচীন উৎসব হচ্ছে ওরছ শরীফ। যে যার যার মতো পারি আমরা ওরছ শরীফ সফল করতে কাজ করি। পাশাপাশি ধর্মীয় এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আদিকাল থেকেই আমাদের বাড়িতে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে থাকি।

এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের পক্ষ থেকে আলহাজ হামিদুল হক, দরবার শরীফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম আলহাজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও আনসার কমান্ডার আনিসুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাজাপীর এনায়েতপুরী (রঃ) ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে অহিংসাপরায়ণ শান্তির বিশ্ব দেখতে, সত্যিকারের ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নে আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি ইসলামের আদর্শে সুফীবাদ ও মানবতার দর্শন নিয়ে সকলকে জীবন গড়ার পথ দেখিয়েছেন। তাই তার ওরছ শরীফকে মহাপবিত্র উৎসব আয়োজন মনে করা হয়। তারা জানান, প্রতি বছর এই মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে মানুষ হিংসা, লোভ, অহংকারমুক্ত দুনিয়াবি জীবন পরিচালনার সাথে সাথে পরকালীন শান্তি ও মুক্তির দীক্ষা নিয়ে ঘরে ফিরে।