চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং’র ‘টর্চার সেল’, কথার অবাধ্য হলেই করা হতো নির্যাতন
সরকারি নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচতলা। চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা। দেয়ালে সাঁটানো ‘নেতার’ নামে পোস্টার। এটি এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত ‘টর্চার সেল’ হিসেবে। এই টর্চার সেলের অবস্থান চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায়। এটি গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং নেতা গোলাম রসুল ওরফে নিশান। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
চলতি মাসের শুরুতে ওই টর্চার সেলের পাশে হামলায় এক দন্ত চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার পর সরেজমিনে সেখানে গেলে এসব কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকায় কেউ গোলাম রসুলের কথার অবাধ্য হলে তাঁকে সেখানে নিয়ে চালানো হতো নির্যাতন। বাদ যায়নি স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
গোলাম রসুল ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি। নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু কমিটিতে বর্তমানে তাঁর কোনো পদ নেই। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে। নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায় তাঁর বাড়ি। নগরের বিভিন্ন থানায় গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারামারির সাতটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ দন্ত চিকিৎসক হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়।
কথা হয় দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা আরেক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন সময় অনেককে নিয়ে আসা হতো। শুধু কান্নার শব্দ শোনা যেত। পরে আবার ছেড়ে দিত। নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের কয়েকজন দোকানদারও জানিয়েছেন একই তথ্য। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু জাফরকেও মারধর করা হয়, জানান স্থানীয় লোকজন। তবে এই বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে কিছু বলতে রাজি হননি। চাঁদার টাকা না পেয়ে মাসখানেক আগে ভাসমান এক দোকানদারকে টর্চার সেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গতকাল সেখানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিশান গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনে ইট, বালুসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করেন। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, বেশি দাম দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী তাঁদের কাছ থেকে নিতে হয়। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে মাসিক চাঁদা, এ কে খান ও অলংকার মোড়ে থাকা বিভিন্ন বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন।
টর্চার সেলের আশপাশের এলাকায় পাঁচজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে জানা যায় , তাঁরা কেউ নিজের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে রাজি হননি নিরাপত্তার কারণে। তাঁদের একজন বলে, ২০১৯ সালে তখন তিনি নবম শ্রেণিতে পড়তেন। তাঁকে গোলাম রসুলের কিশোর গ্যাংয়ের দলে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু রাজি না হওয়ায় তাঁকে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে।
Advertisement for নিরাপদ ই-বাজার
মুক্তা আক্তার
ডে নিউজ বিডি
তারিখ: ২০ এপ্রিল ২০২৪