আজ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী (রহ:)’র ৮০৮তম বেছাল দিবস।

আজ ৬ রজব ১৪৪১ হিজরি!
আতায়ে রাসুল, সুলতানুল হিন্দ, খাজায়ে খাজেগান, গরীব নেওয়াজ খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সাঞ্জেরি আজমিরী (রহ:)’র ৮০৮ তম বেছাল দিবস। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর রূহানী ফয়েয নসিব করুণ- আমীন-বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন।

খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সাঞ্জেরি আজমিরী (রাহ.):  আওলাদে রাসূল হজরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রহমাতাল্লাহি আলাইহি) তিনি ৫৩৬ হিজরী মতান্তরে ৫৩৭ হিজরী তবে বিশুদ্ধ মতে- ৫৩৬ হিজরীর ১৪ই রজব সোমবার দিন বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং ৬৩৩ হিজরী মতান্তরে ৬৩৪ হিজরী মুতাবেক ৬ রজব সোমবার বিছাল শরীফ লাভ করেন।

হযরত খাজা ছাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতার নাম হযরত খাজা সাইয়্যিদ গিয়াস উদ্দীন আহমদ (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এবং মাতার নাম হযরত সাইয়্যিদা উম্মুল ওয়ারা (রহমতুল্লাহি আলাইহা) । হযরত খাজা ছাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতৃ ও মাতৃ উভয় কুল কুরাইশ গোত্রের শ্রেষ্ঠ শাখা সাইয়্যিদ বংশদ্ভূত। অর্থাৎ পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়ে হযরত খাজা ছাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন আল্লাহপাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী বা আওলাদ।
উনার বয়স মুবারক যখন ১৫ বৎসর, তখনই উনার পিতা-মাতা উভয়ে বিছাল  লাভ করেন। পিতা-মাতা উভয়ে যমীন থেকে বিদায়ের পর তিনি ওয়ারিশ সূত্রে শুধুমাত্র একটি যাঁতি ও একটি আঙ্গুর ফলের বাগান লাভ করেন। কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি একদিন ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত উক্ত বাগানে কাজ করছিলেন; এমন সময় উক্ত বাগানে তাশরীফ আনলেন, মজ্জুব ওলী, হযরত ইবরাহীম কান্দুজী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)। গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি যেহেতু মাদারজাদ ওলী ছিলেন, তাই উনার অন্তরে ওলী আল্লাহদের প্রতি ছিল অফুরন্ত ভক্তি ও মুহব্বত। তিনি হযরত ইবরাহীম কান্দুজী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)’র খেদমতে কিছু আঙ্গুর ফল পেশ করলেন। পক্ষান্তরে হযরত ইবরাহীম কান্দুজী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনার থলি থেকে কিছু খাদ্য বের করে চিবিয়ে গরীবে নেওয়াজকে খেতে দিলেন। গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত খাদ্য খাওয়ার পর উনার মধ্যে ভাবান্তর (হাল) সৃষ্টি হয়ে যায়। ফলে তিনি একমাত্র সম্পদ যাঁতি ও বাগান বিক্রি করে ইলমে দ্বীন অর্জন করার জন্য সফরে বের হয়ে যান। প্রথমে বুখারা গিয়ে সাড়ে সাত বৎসর ইলমে ফিক্বাহতে পূর্ণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর ইলমে তাছাউফ অর্জন করার লক্ষ্যে শায়খ তথা পীর ছাহেব তথা মুর্শিদ ক্বিবলা তালাশ করতে লাগলেন এবং তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠ ও বিশিষ্ট বুযূর্গ ও ওলীআল্লাহ হযরত উছমান হারূনী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনার নিকট বাইয়াত হয়ে প্রায় বিশ বৎসর কঠোর রিয়াযত-মাশাক্কাত ও মুরাক্বাবা-মুশাহাদার মাধ্যমে ইলমে তাছাউফে পূর্ণতা হাছিল করেন। এর পূর্বে উনার শায়খ হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! চলুন, আপনাকে আল্লাহ পাক ও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট সোপর্দ করে দিব।” একথা বলে হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে হজ্জে রওয়ানা হয়ে গেলেন। হজ্জ সমাপন করে অর্থাৎ কা’বা শরীফ যিয়ারত করার পর হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! মুঈনুদ্দীনকে আপনার নিকট সোপর্দ করে দিলাম, আপনি উনাকে কবুল করুন।” গাইব থেকে নেদা হলো- “হে উছমান হারূনী! আমি মুঈনুদ্দীন উনাকে কবুল করে নিলাম।” সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর মদীনা শরীফ গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত করলেন। তখন হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! আপনি সালাম পেশ করুন।” তিনি সালাম দিলেন- “আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” রওজা শরীফ হতে জবাব আসলো- “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ইয়া কুতুবাল হিন্দ।” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং উনাকে লক্বব বা উপাধি দিলেন- “কুতুবুল হিন্দ” বা হিন্দুস্থানের কুতুব। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশক্রমে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজ হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল হিন্দুস্তানে চলে আসেন। তিনি অক্লান্ত কোশেশ ও হিকমতপূর্ণ তাজদীদের মাধ্যমে হিন্দুস্তান থেকে শিরক,কুফর, বিদয়াত-বেশরা সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেন এবং উনার উসীলায় অসংখ্য লোক ঈমান লাভ করে মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। বর্ণিত রয়েছে,পৃথিবীর ইতিহাসে উনি একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর উসীলায় আল্লাহ পাক এক কোটিরও বেশি লোককে ঈমান দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এত বিরাট সফলতা অর্জন করার একমাত্র কারণ হলো, তিনি আজীবন আল্লাহপাক উনার মতে মত ও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালামে পাক-এ ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয় যাঁরা আল্লাহকে রব হিসেবে মেনেছে এবং এর মধ্যে দৃঢ় রয়েছে, উনাদের উপর ফেরেশতা নাযিল হবে। অর্থাৎ উনাদের জন্যই রয়েছে গইবী মদদ।” মহান আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ ফরমান, “তোমরা চিন্তিত হয়ো না, পেরেশান হয়ো না, তোমরাই কামিয়াবী অর্জন করবে, যদি তোমরা মু’মিন হতে পারো।” সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহিতিনি যেহেতু মু’মিনে কামিল ছিলেন এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর উপর দৃঢ়ভাবে দায়িম-ক্বায়িম ছিলেন, তাই তিনি এত বিরাট কামিয়াবী বা সফলতা অর্জন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজামুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে কতটুকু কামিয়াবী বা সফলতা হাছিল করেছেন, নিম্নোক্ত ঘটনা থেকে তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। সীরাত গ্রন্থে’ উল্লেখ আছে, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন বিদায় নেয়ার সময় হলো তখন উনার প্রধান খলীফা হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে বললেন, “হে বখতিয়ার কাকী! আমার সময় শেষ, আমার নিকট আল্লাহ পাকের যা নিয়ামত রয়েছে, তা আমি আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি, আপনি তার হক্ব আদায় করবেন। আর আপনি দিল্লি চলে যান, আপনার হিদায়েত বা দ্বীন প্রচারের স্থল হলো দিল্লি।” হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মহামান্য শায়খ উনার নির্দেশ পালনার্থে আমি দিল্লি চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে বিশ দিন পর আমি সংবাদ পেলাম আমার মহাসম্মানিত শায়খ গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিদায় নিয়েছেন। মহামান্য শায়খ উনার বিদায়ের কারণে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। আমি আছর নামায পড়ে জায়নামাযে বসা ছিলাম। এমন সময় আমার তন্দ্রা এসে যায়, আমি দেখতে পেলাম, আমি আমার মহামান্য শায়খ উনার সম্মুখে উপস্থিত। আমি মহামান্য শায়খ উনাকে দেখে সালাম দিলাম ও কদমবুছী করলাম। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার শায়খ! আপনি আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দির জন্য ৯৭টি বৎসর ব্যয় করেছেন। মহান আল্লাহ পাক  আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? জবাবে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হে বখতিয়ার কাকী! প্রথমত মহান আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করেছেন। দ্বিতীয়ত যাঁরা আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে মকবুল, উনারা আরশের অধিবাসী হবেন। অর্থাৎ উনারা সর্বদা আল্লাহ পাক উনার দীদারে মশগুল থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক দয়া করে আমাকে সেই আরশের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ আমি সর্বদা আল্লাহ পাক উনার দীদারে মশগুল আছি।” সুবহানাল্লাহ!
গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিপরিপূর্ণভাবে আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার কারণেই অর্থাৎ সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই এত বিরাট সফলতা অর্জন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “হে হাবীব! আপনি (উম্মাহকে) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহর মহব্বত পেতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। যদি তোমরা আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করবেন। আল্লাহ  অতিশয়ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
মহান আল্লাহ কালাম পাক-এ আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও উনার হাবীব রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ইতায়াত বা অনুসরণ করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।”
কাজেই, কামিয়াবী তথা আল্লাহ পাক উনার খাছ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহিআলাইহি।
উনি যে কতটুকু সুন্নতের অনুসরণ করতেন সে প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়- গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন নব্বই বছর তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাৎ লাভ করলেন। যদিও ওলীআল্লাহ উনারা সর্বদাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ লাভ করে থাকেন। যখন বিশেষ সাক্ষাৎ লাভ করলেন তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিউনাকে বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! (মুঈনুদ্দীন অর্থ- দ্বীনের সাহায্যকারী)! আপনি সত্যিই আমার দ্বীনের সাহায্যকারী, আপনি আমার সব সুন্নতই পালন করেছেন, তবে একটি সুন্নত এখনো বাকি রয়ে গেল কেন?” গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চিন্তা করেদেখলেন যে, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনের খিদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি তখনও বিবাহ করেননি। তাই তিনি নব্বই বৎসর বয়স মুবারকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে পর পর দু’টি বিবাহ করে এ সুন্নতও আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই আল্লাহ পাক উনাকে কুদরতীভাবে ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব দান করেন।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হাবীবুল্লাহ হলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেমন আল্লাহ পাক হাদীছে কুদসীতে বলেন, “আমি আমার রসূল হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছি।”

আর ওলীআল্লাহ উনাদের মধ্যে যদিও অনেকেই হাবীবুল্লাহ। কিন্তু দু’জন ব্যক্তিপৃথিবীতে হাবীবুল্লাহ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। একজন হলেন হযরত যুননূনমিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর দ্বিতীয়জন হলেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা বিছাল শরীফ লাভের পর উনাদের কপাল মুবারকে কুদরতীভাবে সোনালি অক্ষরে লিখিত হয়েছিল- ‘হা-যা হাবীবুল্লাহ, মাতা ফী হুব্বিল্লাহ’ অর্থাৎ তিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতেই তিনি বিদায় গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণযোগ্য যে, এই মহান ওলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরীক্বার নাম হলো- “চিশতীয়া তরীক্বা” অর্থাৎ তিনিই এ তরীক্বার ইমাম। এ তরীক্বা সম্পর্কেও রয়েছে বিশেষ সুসংবাদ। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গাউসুল আ’যম, বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আফযালুল আওলিয়া, মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ন্যায় গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিও শত-সহস্রবার ইলহাম করা হয়েছে এই বলে যে, “হে মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনাকে ক্ষমা করা হলো এবং আপনাকে যারা মধ্যস্থতায় ও বিনা মধ্যস্থতায় উসীলা বানাবে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকেও ক্ষমা করা হলো।” সুবহানাল্লাহ!

কোন তন্ত্র মন্ত্র নয় রূহানিয়ত দ্বারাই দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর জ্বলন্ত প্রমান সুলতানুলহিন্দ, মুজাদ্দিদে যামান হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী আজমেরী সানজেরীরহমতুল্লাহি আলাইহি।

  • হিদায়েতের কার্যক্রম: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ , হুযূরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশক্রমে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৪০ জন সঙ্গীসহ হিন্দুস্থানে আগমন করেন। এ সময়ে হিন্দুস্থান ছিলো হিন্দুরাজাদের রাজত্বে। আর অধিবাসীদের মধ্যে হিন্দুরাই ছিলো সংখ্যাগরিষ্ট ।অন্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিলো খুবই কম। গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি হিন্দুস্থানে প্রবেশ করে প্রথমে লাহোরে হযরত দাতা গঞ্জেবক্স রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফে চল্লিশ দিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে সরাসরি তিনি দিল্লীতে আগমন করেন। এ সময় থেকেই তিনি হিদায়েতের কার্যক্রম শুরু করেন। উনি অন্যধর্মাবলম্বীদের প্রতি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করে হিদায়েতে দাওয়াত দেন। হিন্দুদের অনেকেই উনার রুহানিয়তে দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু তাদের জন্য পরিবেশগত কারনে ইসলাম গ্রহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। হিন্দুদের মধ্যে যারা গোঁড়া শ্রেনীর তারা এবং ক্ষমতাশীল কিছু লোক উনার ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু আল্লাহ পাক উত্তম হেফাজতকারী। হিন্দুরা তাদের মধ্য থেকে একজন শক্তিশালী যুবককে তীক্ষ্ন ধার ছুরি নিয়ে গোপনে উনার মাহফিলে প্রবেশ করে। এবং সামনে এগিয়ে সে তার সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন ঐ যুবকের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বললেন, “চুপ চাপ আছ কেন?” ছুরি বের করে নিজের কাজ সমাধা কর। সময় নষ্ট করে কি লাভ?‍“উনার রুহানিয়ত সর্মদ্ধ মুবারক কথা শোনার সাথে সাথে তার সব উলট পালট হয়ে গেল। সে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উনার নিকট ক্ষমা চেয়ে মুসলমান হয়ে গেল। এবং উনার নিকট ত্বরীকা দীক্ষা নেয়। এ ঘটনা হিন্দু সমাজে ছড়িয়ে পড়ার পর দলে দলে লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলো।

হিন্দু রাজাদের মধ্যে তখন পৃথ্বীরাজ ছিল শক্তিশালী এবং তার রাজধানী ছিল আজমির শরীফে। গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দিল্লী ছেড়ে আজমীর শরীফ যান এবং পৃথ্বীরাজের নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার দাওয়াত পৌঁছালেন। কিন্তু সে ঈমান তো আনলইনা বরং সব ধরনের অত্যাচার, জুলুম করা শুরু করলো। সে উনাদেরকে আনাসাগরের পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করলো। কিন্তু তিনি এক বদনা পানি নিলেন এবং তাতে ওই আনাসাগর দীঘীর সমস্ত পানি শুকিয়ে যায় এবং কি আজমীর শরীফের সকল পানি , সন্তানের মায়ের দুধ ও শুকিয়ে যায় । এরপর উনার কাছে সবাই ক্ষমা চাওয়ার পর আবার পানি ফিরে পায় তারা। এটা মূলত: উনার কারামতের বহি:প্রকাশ। এঘটনার পর দলে দলে মুশরিক মুসলমান হয় এবং উনার হাতে বায়াত গ্রহন করে। পৃথ্বীরাজ এরপর বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়ার ফন্দি করলো। সে তার বড় বড় দৈত্য দিয়ে পাহাড়ের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপ করা শুরু করলো। কিন্তু গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ন্যূনতম ক্ষতি করতে পারলো না। এর পর হিন্দুস্থানের সেরা যাদুকর পৃথ্বীরাজের ভাই জয়পাল যোগীকে ডাকলো । কিন্তু যাদুকর জয়পালও তার সকল চেষ্টা প্রয়োগ করে ব্যর্থ হলো। তখনজয়পালের এ বোধোদয় হলো যে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিবরহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অবশ্যই বড় বুযুর্গ আল্লাহ পাক উনার ওলী। একদিন সে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে এসে উনার হাত মুবারকে হাত রেখে মুসলমান হয়ে উনার মুরীদ হলো এবং নাম ধারন করলো আব্দুল্লাহ। এরপর যিকির ফিকির করে আল্লাহপাক উনার খাছ ওলী হন। ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুরুপান্ডবে অবস্থিত একটা পাহাড়ী জঙ্গল যেটা হযরত আব্দুল্লাহ বিয়াবান রহমতুল্লাহি আলাইহি জঙ্গল নামে পরিচিত।

পৃথ্বীরাজের সমস্ত লোকজন ঈমান আনলেও পৃথীরাজ কিন্তু ঈমান আনলো না।এর পরগরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি পৃথ্বি রাজকে লিখে পাঠালেন যে, “আমরা জীবিত বন্দী অবস্থায় তোমাকে মুসলমানদের হাতে অর্পন করলাম”। এ চিঠির পর পরই সুলতান শাহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর সাথে পৃথ্বীরাজের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ জীবিত বন্দী হয়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। ভারতবর্ষে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডয়ন শুরু হয়। প্রায় চল্লিশ বৎসর ধরে তিনি কোটি কোটি বিধর্মীকে হিদায়েতের দিকে টেনে আনেন। যা উনার বর্ননাতীত রুহানী ক্ষমতার ফলে সম্ভব হয়েছে।

  • রুহানী চেতনা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট: বর্তমান সময়ে কথিত ইসলামী আন্দোলনের কর্তারা হারাম গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।(নাউযুবিল্লাহ)। মুলত: তারা দ্বীনের খিদমত নয় ইবলিশের খিদমত করছে। কারন আল্লাহ পাক উনার গায়েবী মদদ ব্যতীত, রুহানীয়ত ব্যতীত দ্বীনের খিদমত করা সম্ভব নয়। যেটা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনীমুবারক থেকে জানতে পেরেছি। এ ছাড়াও মুসলমানদের অতীত ইতিহাসের দিকে লক্ষ্যকরলে দেখা যায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আল্লাহ পাক গায়েবী মদদ করেছে যদিও উনারা সংখ্যায় অল্প ছিলেন। কিন্তু আল্লাহপাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ নিষেধ মুবারকের উপর ইস্তিকামত থাকার ফলে উনারা গায়েবী মদদ লাভ করেছেন। চরম রুহানী ক্ষমতা হাসীল করার ফলে বাতিল উনাদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। উপরোক্ত উপস্থাপনা থেকে বুঝতে পারি যে, কোন তন্ত্রমন্ত্র নয় রুহানিয়াত এবং শরীয়তের উপর দৃঢ়চিত্ততাই দ্বীন ইসলামের পথে কামিয়াবীর সোপান।

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উছীলায় ভারতবর্ষে ১কোটির উপর বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। অনেক লোক ওলী আল্লাহ হন। উনার বেমেছাল রুহানিয়তের মাধ্যমেই পৃথ্বীরাজের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে , প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ন এক সাম্রাজ্য , আর যা ছিলো সুন্নতী পরিবেশ এবং তাসাউফের এক অনন্য সম্মীলন। এজন্য দরকার হয়নি কোন তন্ত্রমন্ত্র, দরকার হয়নি কোন কথিত বিপ্লব, দরকার হয়নি কোন হরতাল আর লংমার্চ। হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছিল আল্লাহপাক এবং উনার হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। উনি পরিপূর্ন শরীয়তের উপর ইস্তিকামত ছিলেন সঙ্গে ছিল আল্লাহপাক এবং উনার হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গায়েবী মদদ ।