এবার ঈদে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে

এবার ঈদে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে

নিজ্বস প্রতিবেদক:

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসায় এবারের ঈদে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এবছর ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, যাত্রী হয়রানি, ভাড়ানৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগীচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংগঠনটি।

 

এসময় বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি ২০১৮-১৯ সালে ঈদে এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। করোনাকালেও ৬০ লাখ মানুষ ঈদযাত্রা করেছে। কিন্তু এবার প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ মানুষের। ১৬ লাখের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই চাপ কমাতে ও ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে হবে। শেষদিকে সবাই বাড়ি না গিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু হলে সেখানে একটা ব্যবস্থাপনা হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ড. হাদিউজ্জামান অরো বলেন, বর্তমানে দেশে বাসে আট লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ ও মোটরযানে চার লাখ মানুষের যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। বাকি মানুষ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রেন, লঞ্চের ছাদে করে যাবে। সক্ষমতার বাইরে যখন চাহিদা চলে যাবে সড়ক ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে
এদিকে করোনার প্রকোপ কমায় আগের বছরের চেয়ে এবার ৬০ কোটি ট্রিপ বেশি চলবে বলে জানিয়েছেন, সংগঠনটির মহাসচিব মোজ্জামেল হক। তিনি বলেন, করোনা মুক্তির কারণে এবারের ঈদে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে।

এতে আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, সব পথের প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আরো পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ওপর ভ্যাট লাঘবের নির্দেশ মন্ত্রিসভার

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সব পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় বলে দাবি করে ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও যানজটমুক্ত করার দাবি জানান।

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু কিছু পরিবহন মালিক-চালকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবারের সব পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হবে। তাই, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতিবছর সড়ক ও নৌপথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রীবহন, নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা যানবাহন চালাতে বাধ্য করা এবং অদক্ষচালক দিয়ে আনফিট যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌদুর্ঘটনায় প্রতিবছর ঈদে কয়েকশ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছে। এবারও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ থাকায় সড়ক ও নৌদুর্ঘটনার সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি রেল ধর্মঘটের বিষয়ে তিনি বলেন, রেলওয়ে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এটি কাটিয়ে ওঠা না গেলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াবে। অনলাইনে রেলের টিকিট প্রদানের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় যাত্রীর টিকিট কাউন্টার থেকে কালোবাজারিদের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।