মেয়েদের মধ্যে কখন থেকে নাক ফোঁড়ানোর রীতি চালু হয়েছে এবং কেন বাম পাশে নাক ফোঁড়ানো হয়?

দক্ষিণএশীয় মেয়েদের মধ্যে কখন থেকে নাক ফোঁড়ানোর রীতি চালু হয়েছে এবং কেন বাম পাশে নাক ফোঁড়ানো হয়? বিবাহিত মেয়েরাই কেন নাকফুল বা নথ পরে?

নাকফুল, নোলক, নথ প্রতিটিই নাকে পরা হলেও তিনটি কিন্তু ভিন্ন জিনিস এবং প্রত্যেকটি কিন্তু নাকের বাম পাশে পরা হয় না l নাকের নিম্নভাগে ছোট-আকৃতির গোল ধাতব গহনাকে নোলক বলে। নোলক পরতে হলে নাকের নিচে মাঝবরাবর ছিদ্র থাকা আবশ্যক।
নাকের যেকোনো একপাশে ছিদ্র করে তাকে ঘিরে বৃত্তাকার যে অলঙ্কার পরা হয় তাকে নথ বলে। এ গহনার আবিষ্কার কিন্তু কয়েক হাজার বছর আগে। বাইবেলে লেখা আছে, আব্রাহাম তার পুত্রবধূ রেবেকাকে স্নেহের নিদর্শনস্বরূপ নাকফুল উপহার দিয়েছিলেন। তারপর নাকে গহনা পরার রীতি ছড়িয়ে পড়ে বেদুইন আর যাযাবরদের মাধ্যমে।

ষোড়শ শতকে ভারতে মোগলদের আগমনের পরই এ অঞ্চলে শুরু মেয়েদের নাক ফোঁড়ানোর রেওয়াজ। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, মুসলমান, শিখ ও খ্রিস্টানদের মধ্যেও এ গহনা পরার চল আছে। শুধু কি উপমহাদেশে— ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তাও রয়েছে নাকফুলের। অতীতে নাকফুল ছিল বিবাহিত নারীর চিহ্ন। একটা সময় ছিল যখন নারীরা বিবাহিত না অবিবাহিত এটা বোঝা যেত নাকের নাকফুল দেখে।
আমি অনেক জায়গায় দেখেছি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মুসলিম নারীদের দুপাশেই নাক ফুড়াতে, তাদের দু পাশেই নাক ফুল পরা । সধবা নারীরা স্বামীদের মঙ্গলার্থে এই নাকফুল পরেন যাতে করে স্ত্রীদের নিঃশ্বাস, দীর্ঘশ্বাস স্বামীদের গায়ে না পরে। নাকফুল নাকি ঢাল হিসেবে কাজ করে ।
এটা সম্পূর্ণ ভাবে সামজিক প্রথা, কুসংস্কারও বলা যেতে পারে l বিয়ের পর শুধু মেয়েদেরই হাজারটা নতুন কাজ করতে হবে, তথাকথিত প্রথা মেনে চলতে হবে, এ ধরনের নিয়মগুলো আর তেমন নেই। তবে যে কোনো ধর্মের অধিকাংশ নারীরাই বাম নাক ফুরিয়ে থাকেন, কারণ আমি মনে করি এটা কিছুটা বাম হাতে ঘড়ি পরার অভ্যাসের মত ; এটা সৌন্দর্য্যের ব্যাপার।
মেয়েরা দেখবেন, ব্যাগটা কাধে নিলে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাম কাধেই নেয় বা বাম হাতে নেয় । মেয়েরা সিঁথি করে বাম পাশে, আংটি পড়তে পছন্দ করে বাম হাতেই বেশি, ঠিক তেমনি সিমেট্রিক্যালি নাক্ফুলটাও বাম নাকে চলে এসেছে ।
বাম পাশে পরা নাকফুল একজন নারীর সৌন্দর্য্যতাটাকে যত ফুটিয়ে তোলে, ডান পাশে পরা নাকফুল ততটা পারে না । তবে এর ধর্মীয় বা আধ্যাতিক কোনো ব্যাখ্যা আছে বলে আমার ঠিক মনে হয় না, তবে থাকতেই পারে।

সামাজিক রীতিনীতি কিংবা ধর্মীয় বিধিনিষেধ নয়, নাকফুল এখন ফ্যাশনেরই একটি অংশ।অতি সাধারণ সাজ পোশাক পরলেও নাকফুল চমৎকার মানিয়ে যায়। নাকফুল নারী সৌন্দর্‍য্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।