নীলকন্ঠ পাখি (বৈজ্ঞানিক নাম: Coracias benghalensis) একটি অতি পরিচিত পাখি।
আকৃতিঃ নীলকন্ঠ পাখি মাপে ৩১-৩৩ পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথার উপরে কিছুটা নীল রং থাকে এবং পালকের নিচের দিকে নীল রং থাকে। তবে এই পাখিকে অনেকটা কলার মোচার মত দেখা যায়।
বাসস্থানঃ নীলকন্ঠ পাখি সমগ্র ভারত, বাংলাদেশের গারো পাহাড়, হবিগঞ্জ , পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সমগ্র দঃক্ষিণ এশিয়াতে দেখা যায়।
খাদ্যঃ পোকা, কীটপতঙ্গ, ব্যাঙ, সাপের বাচ্চা, টিকটিকি, অ্যাঞ্জন, গিরগিটি ইত্যাদি।
বিস্তারিতঃ
আমাদের দেশে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। ভারতের আসাম ও মণিপুর এলাকায় এদের বিচারণ রয়েছে। এছাড়া নেপাল, ভুটান, ইরান ও আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে নীলকন্ঠ পাখি রয়েছে।
এদের বক্ষের রঙ বাদামী। মাথার উপরের অংশ নীল। আবার শরীরের নিচের দিকটা নীল। শরীরের চেয়ে মাথা একটু বড় এবং ঘাড় খাটো। ডানার উপরিভাগ গাঢ় নীল। ডানার প্রান্তভাগ নীলচে সবুজ। গলার নিচ থেকে বুক এবং ঘাড় বরাবর সাদাটে রেখা রয়েছে। লেজও অপেক্ষাকৃত বড়। লেজের প্রান্তভাগ নীলচে। পায়ে তীক্ষ্ণ শক্ত বাঁকানো নখ আছে।
নীলকণ্ঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে। এক এলাকায় এক বা দুই জোড়ার বেশি থাকে না। আবার একে অন্যের এলাকায় পারতপক্ষে যায় না। চাহনিতে সব সময় সতর্কতা ও ভয় ভয় ভাব থকে। চমৎকার এই পাখি বসে থাকলে গায়ের রং এক রকম, উড়লে অন্য রকম মনে হয়।
এই পাখি বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি, দালানের কার্নিশে বসে শিকারের ওপর নজর রাখে এবং সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নীলকণ্ঠ কীটপতঙ্গ, গিরগিটি, টিকটিকি খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। তবে কখনও কখনও বড় ফুলের মধুও খেয়ে থাকে।
ক্রাক ক্রাক শব্দ করে পুরুষ নীলকণ্ঠ আকাশের দিকে উঠতে থাকে এবং ডানা গুটিয়ে মরার মত নীচে পড়ে যেতে থাকে। তবে এদের মধ্যে স্ত্রীর প্রতি মায়া মমতা বেশি। শিকার ধরে স্ত্রী পাখিকে খাইয়ে দেয়।
পাহাড়, টিলা এবং গাছের গর্তে সামান্য খড়কুটো দিয়ে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী পাখি ৩/৪টা ডিম দেয়। বাচ্চা ফোটাতে ২৪-২৮ দিনের মত সময় লাগে। এভাবে বছরে ২ বার বাচ্চা ফোটায় এরা। বাচ্চা হওয়ার সময় পুরুষ পাখিরা আনন্দে বিভিন্ন ভঙ্গিতে পাখা ঝাঁপটায় এবং নাচানাচি করে।