ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ইলিশ মাছের প্রতি সবারই দুর্বলতা আছে। এই মাছের স্বাদ গন্ধে সব বাঙালিই মুগ্ধ। শুধু স্বাদেই নয় বরং এই মাছ পুষ্টিগুণেও অন্য মাছকে হার মানায়।

প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস হলো ইলিশ মাছ। এতে থাকা পুষ্টিগুণ বিভিন্ন রোগ সারাতে পারে। জেনে নিন ইলিশ খেলে সারবে যেসব রোগ-

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

ইলিশ মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা সাধারণত সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড নিউরোনাল, রেটিনা ও ইমিউন ফাংশনসহ ভ্রূণের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাস্কুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটায়। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও হার্টের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমে।

জিংক সমৃদ্ধ

করোনাকালে জিংকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাই কমবেশি জেনেছেন! অনেক চিকিৎসকরাই এসময় জিংক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

ইলিশে জিংকের পাশাপাশি আরও থাকে প্রোটিন, ক্রোমিয়াম ও সেলেনিয়াম। এটি ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শরীরের কোষের জিনগত উপাদান প্রোটিন ও ডিএনএ তৈরিতেও জিংকের প্রয়োজন হয়।

গর্ভাবস্থা, শৈশব, শরীরের সঠিকভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য জিংকের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সেলেনিয়াম শরীরকে বিশেষ প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। যাকে বলা হয় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অ্যানজাইম। এগুলো কোষের ক্ষতি রোধে ভূমিকা রাখে।

আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অস্টিওআর্থারাইটিসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ইমিউন-মডুলেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। কারণ তারা প্রদাহের লিপিড মধ্যস্থতাকারীদের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে।

যা প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াকে সীমিত বা সংশোধন করতে পারে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বাতের ব্যথা সারায়। তাই ইলিশ নিয়মিত খেলে বাতের রোগীরা উপকৃত হবেন। একইসঙ্গে শরীরের নানা ধরনের ব্যথাও সারায় ইলিশ।

চোখের স্বাস্থ্য ফেরায়

ইলিশে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই দু’টি উপাদানই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অন্ধ হওয়া থেকে চোখকে বাঁচায় ইলিশের গুণাগুন।

ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ

ইলিশ মাছ ভিটামিন এ ও ডি’র একটি বড় উৎস। শুধু এটুকুই নয়। সেলেনিয়াম, আইডিন, পটাসিয়াম, জিংক সবই আছে ইলিশে। বলা হয়ে থাকে ইলিশ ভিটামিন ও খনিজের একটি পাওয়ারহাউস।

ফুসফুসের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে

গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ইলিশ শিশুদের হাঁপানি সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আপনি ফুসফুসের কোনো রোগে ভোগেন, তাহলে সপ্তাহে অন্তত একবার ইলিশ পাতে রাখুন।

হার্টের জন্য উপকারী

ইলিশ মাছ হার্টের জন্য খুব ভালো। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তচাপ ও রক্ত জমাট বাঁধা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার করে।

ডিপ্রেশন রোধে

ইলিশে আছে আর্জিনিন। শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে বিশেষ এক অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে এটি একটি। অন্যান্য অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো, আর্জিনিনও প্রোটিন তৈরিতে ভূমিকা পালন করে।

শরীর প্রোটিন ব্যবহার করে পেশী তৈরি ও টিস্যু পুনর্গঠন করতে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (এমডিডি) আক্রান্ত ব্যক্তিরা ইলিশ মাছ খাওয়ার পর তাদের শরীরের আর্জিনিনের মাত্রা কমেছে। যা সত্যিই বিস্ময়কর। তাই নিয়মিত ইলিশ খেলে ডিপ্রেশন থেকেও মুক্তি মিলবে।

ক্যানসার, হাঁপানি ও সর্দি-কাশির দাওয়াই

ইলিশে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যানসার থেকেও রক্ষা করে। এটি হাঁপানি উপশমেও উপকারী। এমনকি সাধারণ কাশি ও সর্দি প্রতিরোধেও খুবই কার্যকর ইলিশ।

স্নায়ুরোগ সারায়

ইলিশে আছে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। যা ডিমেনশিয়া, পার্কিনসনস বা অ্যালঝাইমার্সের মতো স্নায়ুরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্ন

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত মাছ খেলে অ্যাকজিমা ও সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি মেলে। ইলিশ মাছের প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। কোলাজেন একটি শক্ত, অদ্রবণীয় ও তন্তুযুক্ত প্রোটিন।

যা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্তকারী কোষ হিসেবে কাজ করে। তারা ত্বককে শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা দেয়। কোলাজেন ত্বককে টানটান ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের বয়স বাড়তে দেয় না ইলিশে থাকা গুণাগুন।

পেটের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে

ইলিশ মাছ পাতে রাখলে পেটের যাবতীয সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পেটের আলসার ও কোলাইটিস থেকে রক্ষা করে।

সূত্র: ডেলিশিয়াস ফ্রেশ/গেটবেঙ্গল