স্বাস্থ্য: ভাইরাস জ্বরে কী করবেন? জ্বর নিয়ে যেসব তথ্য জেনে রাখতে পারেন

ভাইরাস জ্বরে কী করবেন?

মোসা. মুক্তা আক্তার
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪
ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর বছরের যেকোনো সময় হতে পারে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। এটি সাধারণত ছোঁয়াচে হয়ে থাকে। ক্রমে এই ভাইরাসজনিত রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে একসঙ্গে পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত হতে পারে। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এমন ভাইরাল জ্বর পরিবারের সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে না। জ্বরের শুরুতে এর প্রকৃতি নিরূপণ করা না গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বরের ধরন ও বিভিন্ন উপসর্গ দেখেই ভাইরাল জ্বর নির্ণয় করা যায়।

প্রচণ্ড গরম আবার ধুম বৃষ্টি, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দেয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এবার যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের ভয়। তাই সাধারণ ভাইরাস জ্বর হলেও অনেকে করোনাভাইরাসের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন। কিন্তু পাশাপাশি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে করণীয়ও জেনে রাখা জরুরি।

ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। এই সাধারণ জ্বর দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই সেরে উঠবে। খুব বেশি হলে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। আর এই জ্বরের ফলে হওয়া শারীরিক দুর্বলতাও সেরে উঠবে কয়েকদিনের মধ্যে। কিন্তু ৪-৫ দিন পর যদি এই জ্বর, সর্দি, কাশি না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ভাইরাল জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতো এটিও আপনা-আপনি সাধারণত ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। ভাইরাসজনিত জ্বরের অন্যান্য রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়।
ভাইরাল জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাচ্চার মুখ লাল হয়ে যায়, গা প্রচণ্ড গরম থাকে, মাথা ব্যথা করে, সঙ্গে থাকে সর্দি ও কাশি। সব সময় মাথা ভারী মনে হয়। এতে বাচ্চারা দুর্বল হয়ে পড়ে।

কীভাবে বুঝবেন ভাইরাল জ্বর
* হঠাৎ জ্বর আসা ও ৭-৮ দিন ধরে চলতে থাকে
* শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হয়
* জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা
* বেশির ভাগ সময় জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকে
* বিশেষ ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে
* গায়ে, হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা হয়
* মুখে বিস্বাদ, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য হয়
* গলায় প্রচুর ব্যথা করতে পারে
* জ্বরের মাত্রা খুব বেশি হলে বাচ্চারা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে

চিকিত্সা ও পরামর্শ
* জ্বর থাকলে জ্বর কমানোর ও শরীরের ব্যথা কমার ওষুধ দেওয়া হয়।
* জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গা-হাত-পা স্পঞ্জ করতে হবে এবং মাথা ধুয়ে বাতাস করে জ্বর কমাতে হবে। জ্বর কখনোই বাড়তে দেওয়া যাবে না।
* খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখে পুষ্টিকর খাবার।
* পরে অন্য উপসর্গ দেখা দিলে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা দেওয়া উচিত।
* বিশ্রামে থাকতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। প্রচুর ফলমূল খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
* সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে সকাল-বিকেল চা বা কফি খাওয়া যেতে পারে।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।

সাবধানতা
ভাইরাসের কারণে জ্বর থেকে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে ভাইরাল জ্বর রূপ নেয় নানা জটিল রোগে যেমন: নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি। এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে।
* মাম্পস, টিটেনাস, চিকেন পক্স, পোলিও, হেপাটাইটিস, স্মল পক্স, টিকা শিশুদের যথা সময়ে দিতে হবে
* বাড়িতে পোষা কুকুরকে নিয়মিত র্যা বিস ভ্যাকসিন দিতে হবে
* ভাইরাল জ্বর হলে রোগীকে একটু আলাদা রাখতে হবে
* জ্বর হওয়ামাত্র চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে

জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক?
* কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিসে পৌঁছার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিলে প্রকৃত রোগটি অনেক সময় ধরা পড়ে না। সুচিকিত্সা পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
* জ্বর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবায়োটিক দিলে বাচ্চাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হওয়ার সুযোগও হয় না। তাই অন্তত দুই দিন না গেলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়। মনে রাখবেন মেনিনজাইটিস বা সেপটিসেমিয়া ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে দেরি করে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে কোনো অসুবিধা নেই