করোনার মহামারিতে মানবতার সেবায় লিজার “মেহমান খানা “

করোনাকালে মানবতার সেবায় মিস লিজার “মেহমান খানা ” দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। করোনার মহামারি সংকটের সময় গতবছর রোজায় এই মেহমান খানার যাত্রা শুরু হয়। মেহমান খানার উদ্যোক্তা লিজা আপু বলেন – করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যখন লকডাউন দেওয়া হয় , যখন সব ধরনের দোকান, রেস্টুরেন্ট , মার্কেট অফ হয়ে যায় । তখন শুরুর দিকে লিজা আপু পাখিদের জন্য , কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন, একদিন দেখেন রাস্তায় শিশুরা একটা খাবার দোকানের তালা ভাঙ্গছে , শিশুদের থেকে যখন জানতে চাইলেন , কেন তারা তালা ভাঙ্গছে ? উত্তরে শিশুরা বলছে তারা ক্ষুধার তাড়নায় এই কাজ করছে ।

সেই দিনের পর থেকে চেতনায় কাজ করছে , ওনি তো একবার ও অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের একবার ও ভাবে নাই । তারপর থেকে লিজা আপু বাসায় রান্না করে রিকশায় করে নিউমার্কেটের অসহায় মানুষদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন । পরে আস্তে আস্তে তার বাসার সামনে অসহায় মানুষদের জন্য এই ” মেহমান খানার ” আয়োজন ।

রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন ইফতারের সময় বাড়তে থাকে মেহমানদের সংখ্যা। এখানে আসা বেশিরভাগ মেহমান সমাজের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। এদের মধ্যে কেউ রিকশাচালক, কেউ দিনমজুর, কেউ ফল বিক্রেতা আবার কেউ আশেপাশের কোনো বাসাবাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী। তবে এখানে আসার পর তাদের একটাই পরিচয় তারা মেহমান খানার মেহমান।

ইফতারের সময় দেখা যায়, লালমাটিয়া এলাকার রাস্তার দুইপাশের সারি সারি রিকশার লাইন। মেহমান খানার স্বেচ্ছাসেবকেরা একে একে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ইফতারের জন্য শরবত, পানীয় এবং রান্না করা খাবার। মেহমানরাও সুশৃঙ্খলভাবে খাবার নিচ্ছেন।

এছাড়াও যারা বাসায় নিয়ে যেতে চান তাদেরও চাহিদামতো খাবার সরাবরাহ করা হয়। বাসায় খাবার নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও নেই কোনো বিধিনিষেধ। দুজন-তিনজন বা তার অধিক লোকের জন্য খাবার চাইলেও স্বেচ্ছাসেবকেরা খাবার দেন।

মেহমান খানার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১১শ থেকে ১২শ লোক তাদের মেহমান খানার খাবার খান। মাঝে মাঝে দেখা যায়, যে পরিমাণ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে মেহমান তার থেকে বেশি চলে এসেছে। তখন তাদের জন্য ছোলা-মুড়ি-খেজুর বা অন্য কোনো খাবার সরবরাহ করা হয়। তাতেও না হলে মেহমানরা নিজেরাই নিজেদের খাবার হাসিমুখেই কয়েকজন ভাগ করে খেয়ে নেন।

প্রতিদিন ইফতারের আগে হ্যান্ড মাইক দিয়ে লালমাটিয়া এলাকায় মাইকিং করা হয়।

ইফতারের সময় এখানে খাবার গ্রহণ করা রায়ের বাজার এলাকার জাফর নামক একজন রিকশাচালক বলেন, গরিব মানুষের জন্য এমন আয়োজন করায় আমরা খুশি। এখানে একসঙ্গে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ইফতার করে। আল্লাহ যেন তাদের আরও মানুষদের সেবা করার সুযোগ দেয়, সেই দোয়া করি।

  • Save

নূর ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, আমার পরিবারে আর কেউ নেই। আমার মতো অসহায় মানুষদের যারা খাওয়াচ্ছে তাদের জন্য আমি মন থেকে দোয়া করি, তারা যেন এমন ভালো কাজ আরও বেশি বেশি করতে পারে।

আয়োজকরা জানান, এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৭ জন থেকে ২৫ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক শ্রম দেন। এসব স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছেন যিনি স্কুল শিক্ষিকা, স্কুল বন্ধ থাকায় এই সময়টা তিনি এখানে মানুষের সেবা করছেন। আবার এমন স্বেছাসেবকও রয়েছেন যিনি ঢাকায় রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

আয়োজকদের আরও একজন হচ্ছেন, সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন। তিনি ডে নিউজকে  বলেন, করোনার বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করে জিততে হবে। এই লড়াই একা জেতার লড়াই না, তাই আমরা সবাই মিলে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এই তাড়না থেকে মেহমান খানার যাত্রা শুরু।

তিনি আরও বলেন, এইখানে যারা আসেন খাবার খেতে তাদের পরিচয় একটাই তারা আমাদের মেহমান।

মেহমান খানার অর্থের যোগান কীভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে টাকা দিয়ে মেহমান খানা চালু করি। তবে বর্তমানে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব, এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশ কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করেন। এসব সাহায্য সহযোগিতা দিয়েই আমাদের মেহমান খানার কার্যক্রম চলছে।