আবু ত্ব-হা কে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী

বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন নিখোঁজ ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান এর স্ত্রী সাবিকুন্নাহার । ত্ব-হা সহ চারজন গত ১০ জুন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ ত্ব-হার সন্ধান দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘তিনি নিরীহ মানুষ, ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, নয়তো আমাকে তার কাছে নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থে তিনি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হোক। আমি কিছু বলব না। তিনি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। আমি এবং কিছু যুবক ছাড়া তার পাশে কেউ নেই।’

চারজন মানুষকে গাড়িসহ নিয়ে যাওয়া কোনো প্রাইভেট (ব্যক্তিগত) কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে বিকেল ৪টার দিকে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুটি মোটরসাইকেল তাদের অনুসরণ করছিল। তিনি (ত্ব-হা) বলছিলেন, দোয়া করো যেন কিছু না হয়। এর ২০ থেকে ২৪ মিনিট পর ফোন করে জানান বাইকগুলো চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‌‘ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ার একটি প্রোগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন ত্ব-হা, তার দুই সহযোগী ও প্রাইভেটকারচালক আমির। উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রাম শেষে তিনি ঢাকায় আমার কাছে আসবেন। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে বাসায় ফিরে কী খাবা, কী রান্না করবো? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি রেগে যান আমার ওপর। রেগে গিয়ে ত্ব-হা বলেন আমাদের প্রাইভেটকারের পেছনে দুটি বাইক ফলো করছে। আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছাতে পারি।’

‘এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে বলেন বাইক দুটি আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি রান্না করো, আমরা চারজন বাসায় এসে ভাত খাবো।’

সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘তার সঙ্গে যখনই কথা হয় তখনই তিনি লোকেশনসহ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্রিনশট পাঠান। ওইদিনও একাধিকবার আমাকে লোকেশন পাঠিয়েছেন। রাত ২টার দিকে সর্বশেষ আমি তাকে ফোন করি। কিন্তু তিনি ঘুমানোর কারণে আমার ফোন রিসিভ করতে পারেননি। ঘুম ভাঙার পরে রাত ২টা ৩৭ মিনিটে একটা ম্যাপ শেয়ার করেন। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এরপর তার মেসেজ দেখে ঘুম থেকে উঠে খাবারের ব্যবস্থা করতে যাই। তার ম্যাপে দেখাচ্ছিল বাসায় পৌঁছাতে ১৮ মিনিট লাগবে।’

‘এরপর অপেক্ষা করতে করতে রাত ৩টার দিকে তার নম্বরে ফোন করি। কিন্তু তখন থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাই। এরপর প্রাইভেটকারচালক আমিরের নম্বরে ফোন করি। তার মোবাইলও বন্ধ পাই। তখন আমার সন্দেহ হয়। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৫টা বেজে যায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, ‘বগুড়ায় যে প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। তিনি রাস্তায় থাকার কারণে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ ছিল না। ভেবেছিলাম বাসায় আসার পর তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবো। আমার ওপর রেগে যাওয়ার কারণে জিজ্ঞাসা করিনি। শুধু এতটুকুই জানি বগুড়ায় তার প্রোগ্রামটি হয়নি।’

এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এর আগে কখনো এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি কিংবা কখনো বলেনওনি। তবে তিনি মজসিদে খুতবা বা লেকচারের কারণে মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলার সম্মুখীন হতেন বলে আমাকে বলতেন। এ বিষয়গুলো তিনি তার লেকচারেও তুলে ধরেছেন।’

বগুড়ার প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আয়োজকদের কোনো নাম্বার আমার কাছে নেই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সংবাদ সম্মেলনেও আমি অভ্যস্ত নই, এর আগে কখনো এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে আসিনি।’

কারো প্রতি সন্দেহ করছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। অনেক সময় অনেকে তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য করতেন, অনেক রকমের কথা বলতেন। এজন্য কোনো প্রেসার এলো কি-না তা বলতে পারছি না। আবার কখনো মনে হয় তিনি জিও পলিটিকস নিয়ে কথা বলতেন, পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে আলোচনা করতেন। আন্তর্জাতিক কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কি-না তাও বুঝতে পারছি না।’

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনির বিষয় নিয়ে ত্ব-হার আলোচনার বিষয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই মুসলিম। আর মুসলিম বলতেই সবাই আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসি। আল-আকসার ব্যাপারে যাদেরই রক্তচক্ষু থাকবে তাদের কারণে আমাদের দিল থেকে একটা যন্ত্রণা থাকবেই।’

পড়াশোনার বিষয়ে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, ‘তিনি ফিলোসফিতে মাস্টার্স করেছেন এবং সানাফি মাদরাসা থেকে আরবিতে অনেক শিক্ষকের থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। কিন্তু সানাফি, হাম্বলি, কওমি, দেহবন্দি কিংবা আহালে হাদিসের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি সংকীর্ণ মনের ছিলেন না। হকটা সব জায়গা থেকে গ্রহণ করতেন এবং প্রচুর পড়াশোনা করতেন। বিশেষ করে ত্বকী উস্মানীর বইগুলো বেশি পড়তেন। এ ছাড়াও বিদেশি লেখকদের বইও তিনি পড়তেন। তার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল জেনারেল।’