সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, খ্যাতিমান আমলা ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. সা’দত হুসাইন গতকাল বুধবার (২২ এপ্রিল) রাত ১০টা ৪৯ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি ১৩ এপ্রিল সোমবার থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অচেতন; ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। মেনিনজাইটিস, ব্রেনের বাইরে ফ্লুইড জমেছিল, বের করার চেষ্টা চলছিল। সাথে ডায়াবেটিস ফলে কিডনির ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে অবশেষে অনন্তের পথে চলে গেলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মানুষটি।
২০০২-২০০৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন সা’দত হুসাইন। এরপর তিনি ২০০৭ থেকে ২০১১ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. সা’দত হুসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.আব্দুল মোমেন। আজ এক শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,সা’দত হুসাইন ছিলেন আমার এক সময়ের সহকর্মী ও সহযোদ্ধা। তিনি অত্যন্ত সৎ ও দৃঢ়চিত্তের অধিকারী ছিলেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সরকারি আইন ও বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতেন। ড. মোমেন মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার সকালে এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, নোয়াখালীর কৃতি সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ভারতে প্রবাসী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইনের মৃত্যুতে তার পরিবার, নিকটাত্মীয়দের মতো আমিও গভীরভাবে শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছি। আমি তার আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। মন্ত্রী পরিষদ সচিব সা’দত হুসাইন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয়েও স্বাধীন মত প্রকাশে কখনোই দ্বিধান্বিত ছিলেন না। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন ঋজু ও নির্ভীক। তিনি কথা বলার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন এবং নিজ মতামত প্রকাশে ছিলেন নির্ভয় ও অবিচল।
নম্রতা, বিনয়, সৌজন্য ও সহিষ্ণুতা ছিল স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী এ মানুষটির সহজাত বৈশিষ্ট্য। এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের কারণেই সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সর্বমহলে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার সততা ও নিষ্ঠা ছিল ঈর্ষণীয় উচ্চতার। সে কারণেই পেশাগত জীবনে সরকারি সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থেকেও তিনি নিজ কর্তব্যকর্ম থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশমাতৃকার মুক্তির প্রশ্নেও তিনি ছিলেন আপোষহীন। ৭১ সালে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তা উত্তর প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হবে। তার মৃত্যু নিঃসন্দেহে জাতির জন্য বেদনার।
ডে নিউজ পরিবার তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, গুণগ্রাহী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।