চলমান বিচ্ছিন্নতা ও বন্দিত্বের দিন পেরিয়ে মানবতা ও প্রকৃতির নিবিড় মেলবন্ধনে গড়ে উঠবে এক নতুন পৃথিবী- নবপ্রেরণা সঞ্চারণের এমন গানই ধ্বনিত হয়েছে এবারের বাংলা বর্ষবরণের ডিজিটাল আয়োজনে।
ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেছেন, “উৎসবের দিন নয় আজ। বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করবার দিন। নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি সকলকে নিরাপদ রাখার সময়। এই সর্বব্যাপী বিপদে আক্রান্ত বিরূপ বিশ্বে মানুষ একা হয়ে পড়েছে, আবার সকল বিশ্ববাসী আজ একই সংগ্রামের সহযাত্রী হয়ে মিলেমিশে একাকার।“
করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় কেবল সঙ্গনিরোধ। তাই সরকার এবারের নববর্ষে বাইরে সমবেত না হয়ে সবাইকে ঘরে থেকে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছিল। তাই বাঙালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রতীক হয়ে ওঠা রমনা বটমূলের বদলে ছায়ানট এবার বৈশাখের প্রথম প্রভাতে হাজির হয় ডিজিটাল আয়োজন নিয়ে। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের এ আয়োজন।
ফসলি সন হিসেবে মুঘল আমলে যে বর্ষগণনার সূচনা হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়; শুধু তাই নয় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাঙালিকে লড়াইয়ের প্রেরণাও দিয়ে আসছে বর্ষবরণের এই উৎসব।
কিন্তু বাঙালির উৎসবের এই দিনটি এবার এসেছে নজিরবিহীন এক সঙ্কেটের মধ্যে। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা নভেল করোনাভাইরাস বাঙালিকেও ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন আট শতাধিক মানুষ, মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই অদ্ভুত যুদ্ধের মধ্যে রঙ হারিয়েছে বাঙালির পহেলা বৈশাখ। রমনার বটমূলেও এবার নতুন বছরের আবাহনী গান শোনা যায়নি।
বিশ্বমানব এখন বিপর্যস্ত, সব আনন্দ আয়োজন তাই স্তব্ধ হয়েছে ঢের আগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সব আয়োজন গুছিয়ে এনেও শেষ পর্যন্ত আর সেভাবে করা যায়নি । বর্ষবরণের আয়োজনও গেছে একই পথে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিয়তই মানুষে-মানুষে, মানুষে-প্রকৃতিতে অভিনব এক সংযোগ সৃষ্টি করে। নতুন দিনের আশা নিয়ে নববর্ষ ফিরে ফিরে আসে বাঙালির জীবনে। কিন্তু আজ নতুন বছরের বার্তা যেন নতুন আশাকে ধূলিসাৎ করে দিতে চায়। জাতির জীবনে আজ ঘোর দুর্দিন, সমগ্র বিশ্বসমাজ আজ বিধ্বংসী মহামারীতে আক্রান্ত।
বিপদ আক্রান্ত এই বিরূপ প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ছায়ানট সভাপতি তাই এক নতুন বিশ্ব গড়ার সংগ্রামের সহযাত্রী হতে আহ্বান জানান, ডাক দেন ঐকান্তিক মিলনের।
সভ্যতা, মানবতা ও প্রকৃতির নিবিড় মেলবন্ধনে আমরা আস্থা রাখি। কামনা করি বিচ্ছিন্নতা ও বন্দিত্ব পেরিয়ে নতুন উপলব্ধিতে নতুন বিশ্ব গড়বার প্রেরণা সঞ্চারিত হবে সবার মধ্যে, মহা-সঙ্ককট বয়ে আনবে মহা-পরিবর্তন, কেননা, মানুষই পারে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আলোর পথের অভিযাত্রী হতে।
ছায়ানট সভাপতি বলেন, পৃথিবীর ঘরে ঘরে যত মানুষ আছে, সবার জন্যে শুভকামনা জানাই আমরা। জয় আমাদের হবেই। সবার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের সেই কথা ফিরে উচ্চারণ করব আজ– ‘জয় হোক মানুষের, ওই চিরজীবিতের।