যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহ্পাক তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তার অন্যতম। তাফসীর-হাদিস ও বিজ্ঞ আলিমদের পরিভাষায় যাকে ليلة النصف من شعبان বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান অর্থঃ শাবানের মধ্য রজনী নামে অভিহিত করা হয়। যে রাতটি হলো শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। আমাদের বাংলাদেশে চাঁদের হিসাবে তা আগামীকাল ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সলফে সালেহীনগণ এবং বিজ্ঞ মনীষীগণ এ রাতটিকে অত্যন্ত গুরুত সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে মুসলমানগণ এরই ধারাবাহিকতায় এ রাতটি পালন করে আসছেন। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে পালন করা হয়ে থাকে। এ রাতে মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা রাতব্যাপী নামাজের পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম ও বিশেষ অজিফার মধ্য দিয়ে প্রার্থনারত থাকেন। বিকাল থেকেই বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের জমায়েত বাড়তে থাকে ও সন্ধ্যার পর মসজিদগুলোতে চলে বিশেষ ওয়াজ মাহফিল। ঘরে ঘরে ইবাদত বন্দেগীর আয়োজনের সাথে সাথে উত্তম খাবার তৈরি ও অতিথি আপ্যায়নসহ পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে খাদ্য বিতরণ চলে।
* তবে করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের কারণে এবার নিজ নিজ বাসায় পবিত্র শবে বরাতের ইবাদত বন্দেগী যথাযথ মর্যাদায় আদায় করার জন্য সবাইকে বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মসজিদগুলোতে বিশেষ নজরদারি ও জনসমাগম না করতে অনুরোধ জানান হয়েছে।
নামকরণ:
شب برات (শবে বরাত) ফার্সী শব্দ, شب (শব) মানে রাত আর برات (বরাত) মানে ভাগ্য, অর্থাৎ ভাগ্যরজনী। আর এ পবিত্র রাতের বিভিণœ নাম পাওয়া যায়। ১. ليلة البراء ة (লাইয়লাতুল বরাত বা বণ্টনের রাত, ২. ليلة مباركة (লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রজনী) ৩. ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমা বা করুণার রজনী) ও ৪. ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছাক বা সনদপ্রাপ্তির রাত।
বছরে পাঁচটি পুণ্যময় রজনীর মধ্যে শবে বরাত অন্যতম একটি। শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মুক্তির রজনী। এ রাতে নিহিত রয়েছে মুসলমানদের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রজনী।
এ রাতের ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মুসলমানদের গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। হাদিসে এ রাতের বহু কল্যাণ ও ফজিলতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
পবিত্র শবে বরাতের বরকতময় রজনীকে কেন্দ্র করে সাত প্রকারের আমল করার ব্যাপারে আলেমরা উৎসাহ প্রদান করেছেন-
(১) বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।
(২) বেশি করে পবিত্র কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করা।
(৩) বেশি বেশি ইস্তিগফার করা ও দরূদ শরীফ পাঠ করা।
(৪) বেশি বেশি দান ছাদকা করা।
(৫) কবর জিয়ারত করা
(৬) মৃত ব্যক্তির জন্য ইছালে সওয়াবের ব্যবস্থা করা।
(৭) পরের দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখা।
এ রাতে নফল নামাজের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যত রাকাত ইচ্ছা এবং যেকোনো সূরা দিয়ে অন্যান্য নামাজের মতোই পড়া যাবে।