ফার্স্ট গ্ল্যান্সে এই ছবিটার ভয়াবহতা টের না পাওয়া গেলেও জানবেন এরকম প্লাস্টিক, পলিথিনসহ নানান অপচনশীল দ্রব্যে আটকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক প্রাণী মারা যায়। এগুলোর কিছু ভয়াবহ ছবি গুগুলে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন। এই অকারণ মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী আমাদের অসভ্যতা।
বাংলাদেশে বাজার করার সময় একটা ব্যাপার খেয়াল করতাম, কেউ ৫ কি ১০ টাকার জিনিস কিনলেও সেটা পলিথিন ছাড়া বহনযোগ্য হোক বা না হোক সাথে আলাদা একটা পলিথিন না দিলে রীতিমতো খেপে যায়, যেন এই পলিথিনের উপর যেন তার বংশীয় মান-মর্যাদা নির্ভর করছে। অথচ বাসায় ফিরে এসে এই পলিথিনের জায়গা হয় সোজা ডাস্টবিনে, এইসব পলিথিনের খুব সামান্য পরিমাণেই রিইউজড হয়। অথচ এই অসভ্য মানসিকতার মূল্য দেয় আমাদের চারপাশের প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ। অথচ সামান্য একটু চেষ্টা আর অভ্যাসবদল করলেই পলিথিনের কনজাম্পশন কমে যাবে অনেকখানি! যাদের কাঁচাবাজারের প্র্যাক্টিস আছে চাইলেই একটা কাপড়ের বাজারের ব্যাগ নিজের ব্যাগে রাখা যায় আর একান্ত বাধ্য না হলে অহেতুক পলিথিন নেয়ার অভ্যাসটা সচেতনভাবে কমানো যায়।
২০০২ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে পলিথিনের বিরূপ প্রভাব চিন্তা করে বাংলাদেশে পলিথিনের গণব্যবহার নিষিদ্ধ করেন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। নিঃসন্দেহে এটা প্রচন্ড স্মার্ট একটা মুভ ছিল। প্রথম কয়েক বছর বেশ জোরেশোরে পলিথিনের ব্যবহার কমেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ আবার পলিথিন ফিরে এসেছে, আগের চেয়ে আরো ভয়াবহভাবে। এখন সেটা একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। অথচ এখন পলিথিনের ঘাড় চেপে ধরার সুযোগ বেড়েছে, আগে বিকল্প ছিল না, এখন বিকল্প এসেছে। পাট থেকে বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিনের প্রযুক্তি এসেছে, আরো বেশ কিছু একইরকম উদ্ভাবনের কথা জেনেছি। অথচ এই পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলোর প্রতি বাংলাদেশের কি নিদারুন অবহেলা, বিশ্বের অন্যান্য দেশ এসব লুফে নিচ্ছে! অথচ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় নিয়ে আমাদেরই সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হবার কথা। আবার এই করোনাকালীন সময়ে প্লাস্টিক আর পলিথিনের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বেড়েছে সূচকীয় হারে, এটার প্রভাব এখনই দৃশ্যমান। তবে আপাতত এইক্ষেত্রে আমরা অসহায়।
আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে পলিথিন ও প্লাস্টিকের মিনিমাল ইউজার, এগুলো যতটা যম্ভব রিইউজ করার চেষ্টা করি। ছোট ছোট অভ্যাস বদলে নিয়েছি, গিফট র্যাপ করি পেপার র্যাপ দিয়ে, ওয়ানটাইম প্রোডাক্ট পারতপক্ষে এভয়েড করি। আর এখানে যত্রতত্র পলিথিন ছুড়ে ফেলার সুযোগই নেই! এই কাজগুলো করে যে নিজেকে মহান বানিয়ে ফেলছি তা না, বরং নিজের পাপ কমাচ্ছি, আমাকে দিয়ে, আমাকে খাইয়ে, আমাকে বাচিয়ে রাখতে গিয়ে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটাকে মিনিমাল একটা লেভেলে নেয়ার চেষ্টা করা। এই একই সচেতনতা অন্যদের কাছ থেকেও আশা করি। বিশ্বাস করেন, এই কাজগুলো মোটেও কঠিন না, কেবল মাইন্ড সেটাপটা জরুরী।
নিজের পাপ কমাই, পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে কিছুটা হলেও কন্ট্রিবিউট করি।
লেখা -তাশরিক হাসান