জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী সরকার বলতো আপনারাই আন্দোলন করছেন। ঢাবি সভাপতির সামনে আসা কি সেটা ইঙ্গিত দেয়, আপনারাই কি মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: এই আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছে। যেহেতু ছাত্রশিবির ছাত্রদের সংগঠন, আর আন্দোলনের যাত্রা শুরু যেহেতু ছাত্রদের দিয়ে তাই ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণ ছিল। তবে এ আন্দোলন ছাত্রদের সঙ্গে সব মানুষ অংশ নিয়েছিল।
বিগত সময়ে ছাত্রদলের সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো। এখন ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে তারা আপনাদের প্রতিপক্ষ হবে কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার শুরু এবং এর আগের সময়ের দৃশ্যগুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। এক সময়ে রাজনৈতিক চর্চার কারণে ক্যাম্পাসগুলোতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসে যে গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল তা ফ্যাসিবাদের চর্চায় পরিণত হয়। তবে এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা একটি বিপ্লবের পরে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখছি। আমরা মনে করি ছাত্রদল কিংবা কোনো সংগঠন আশা করছি শুধু নিজেদের জন্য কাজ করবে না, একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। আদর্শিক জায়গায় ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে।
ছাত্রশিবির এখনো ঢাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন। বাম দলগুলো কিংবা ছাত্রদল বলেছে এখানে রাজনীতি করতে হলে আগের বিষয়গুলো ক্লিয়ার করেই আসতে হবে। আপনারা এ বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ঢাবি ছাত্রদল বা যারা এসব কথা বলছেন, আমি মনে করি এখনো তারা বৈষম্যের কথা বলছেন। এর আগে পরিবেশ পরিষদ বা এ ধরনের সংগঠনের নামে ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধকরণ আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ীই সব দলের রাজনৈতিক চর্চার অধিকার আছে। এই সময়ে এসে এ ধরনের বৈষম্য করবে তা হওয়া উচিত নয়। তাই আমরা মনে করি যারাই বলেছেন তারা অযৌক্তিক বলেছেন। এখনো যারা বলছেন তারা এ জাতির সঙ্গে আবারও বৈষম্য করার ষড়যন্ত্র করছেন।
বিগত সময়ে আপনাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। সামনের দিনে কীভাবে কাজ করবেন?
মঞ্জুরুল ইসলাম: বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সব সময় অব্যাহত ছিল। আমরা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা সেভাবে কাজ করতে পারেনি। তবে এখন হয়তো সেই স্পেসটা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সংগঠন কার্যক্রম সব সময় চালু রেখেছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে চলমান থাকবে।
তৌহিদি জনতার নাম দিয়ে মাজারে হামলা হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে ছাত্রশিবির জড়িত কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ছাত্রশিবির বা যারা আমাদের ভালোবাসে তারা এভাবে মাজার বা কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। হয়তো কিছু মহল আমাদের মাজার ভাঙার মিথ্যা অপবাদ দেয়। তবে এ ধরনের কোনো সত্যতা তারা কখনো প্রমাণ করতে পারেনি। মাজার ইস্যুতেও কেউ এ ধরনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারবে না।
ইসলামি দলগুলো থেকে বলা হয় গণতন্ত্র কুফর। এ ধরনের বিষয়ে ছাত্রশিবির ইসলামি দলগুলোর থেকে রাজনীতির মাঠে বাধাপ্রাপ্ত হয় কি না?
মঞ্জুরুল ইসলাম: ছাত্রশিবির ইসলামকে ধারণ করেই চলে। বিভিন্ন দল আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালায়। তবে যারা ইসলামকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করে তাদের আমরা নিজেদের ভাই মনে করি। কেউ যদি আমাদের যৌক্তিক সমালোচনা করে আমরা তা গ্রহণ করি। তবে আমাদের বিষয়ে যদি কোনো অপপ্রচার হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতন থাকি।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে আপনাদের স্ট্যান্ড কী?
মঞ্জুরুল ইসলাম: বাংলাদেশ যে দুঃসময় পার করেছে সেখানে ছাত্রদের অধিকারের পক্ষে যে রাজনীতি, রাজনীতির মধ্যে যে কল্যাণ রয়েছে এমন কিছু তারা দেখেনি। ছাত্ররাজনীতি যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে এখান থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার যে সুযোগ তা বন্ধ হয়ে যাবে। দক্ষ, যোগ্য নেতৃত্ব যেখান থেকে গঠিত হয় তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে। তাই ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার চায়। এর মাধ্যমে জাতি উপকৃত হবে।
new era it village