বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকে কেএনএফের ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা , অস্ত্র লুট ও ম্যানেজার অপহরণ

গতকাল (২ই এপ্রিল, ২০২৪) রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক শাখায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও ১৪টি অস্ত্র লুট, ৪ শতাধিক বিভিন্ন অস্ত্রের বুলেট লুট করেছে। তারা যাওয়ার সময় ব্যাংক ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

  • Save

সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)’-এর ইউনিফর্ম পড়া ছিল এবং প্রায় সবার হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, রাত ৯টার দিকে প্রায় শতাধিক অস্ত্রধারী উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় ঢুকে পড়ে।

তারা প্রথমে মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের জিম্মি করে তাদের সব মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। মসজিদ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে ব্যাংকের চাবি কেড়ে নেয়।
পুলিশ সুপার জানান, অস্ত্রধারীরা উপজেলা পরিষদ ভবনে অবস্থিত ব্যাংকে ঢুকে এবং সেখানে থাকা পুলিশের নিরাপত্তা প্রহরীকে আঘাত করে তার অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে সেখানে থাকা পুলিশের আরো ৯টি অস্ত্র এবং পাশের আনসার কক্ষ থেকে আরো ৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়।

পুলিশ সুপার জানান, সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ২টি ভল্টের মধ্যে ১টি ভল্ট ভেঙে সেখানে থাকা নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। তবে কত টাকা লুট হয়েছে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সুপার জানান।

তিনি জানান, কর্মচারীদের মাসিক বেতন এবং ঈদ বোনাসখাতে প্রদানের জন্য সোনালী ব্যাংক, বান্দরবান শাখা থেকে মঙ্গলবার সকালে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ওই ব্যাংকে পাঠানো হয়।

এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সুযোগ নিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা উপজেলা কমপ্লেক্সে বিভিন্ন অংশে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন স্থানে পজিশন নেয়।

  • Save
  • Save

এর ফলে পুলিশ বা অন্য কোনো নিরাপত্তাকর্মী তাদের অবস্থান টের পায়নি। ব্যাংক লুটের পর তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী বেথেলপাড়া এবং পলিখাল দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এত বড় ঘটনায় কোনো পক্ষই গুলি চালায়নি।
রুমা উপজেলা সোনালী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় যৌথ অভিযান শুরু করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন।

স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ এবং তাদের সামরিক শাখা ‘কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)’ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মাধ্যমে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এই কমিটির মধ্যস্থতায় ইতিমধ্যে কয়েকটি ভার্চুয়াল সংলাপ এবং দুটি সরাসরি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দুটি সরাসরি সংলাপের প্রথমটিতে ৪ দফা সমঝোতা চুক্তি এবং দ্বিতীয় বৈঠকে ৭ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ মাসের ২২ তারিখে তৃতীয় সরাসরি সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মধ্যেই বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে শান্তি উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কেএনএফ ও কেএনএ।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য সচিব রেভারেন্ট জারলম বম জানান, এই ঘটনার পর বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।