উন্নয়নের শীর্ষে থাকা দেশেগুলোর শিক্ষাব্যবস্থার সাথে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্য

একটি দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের শীর্ষে নিতে হলে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা খুবিই প্রয়োজন। মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে পারলে একটি জাতি খুবই দ্রুত অগ্রসর হয় উন্নতির শিখরে । বিশ্ব শিক্ষায় এক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কিছু দেশ। কিন্তু আমাদের দেশ সেই তুলনায় নগন্য। আজ উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতা নিয়ে  পাঠকদের জন্য কিছু তথ্য দেয়া হলো-

অন্যান্য দেশে যা হয়:

নেদারল্যান্ড :

নেদারল্যান্ডসের স্কুলে শিক্ষার্থীদের নতুন ক্লাসে ওঠার আগে নির্দিষ্ট কিছু প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করতে হয় যেমন, জুতার ফিতা বাঁধা, সাঁতার কাটতে শেখা, সাইকেল চালাতে পারা ইত্যাদি। তাকে সামাজিক শিষ্টাচার, খাওয়ার আদব, নিজের খেলনা ও বইপত্র গুছিয়ে রাখা, রাস্তা পার হওয়া, বাজার করাসহ নানাবিধ বাস্তব জীবনে

  • Save
ব্যবহার্য কাজ আনন্দময় পরিবেশে হাতে-কলমে শেখানো হয়। সব স্কুলে বইয়ের লাইব্রেরির পাশাপাশি খেলনার লাইব্রেরি থাকে; সবাইকে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করতে হয়। স্কুল থেকে বাচ্চাদের গাছের বীজ সরবরাহ করা হয়, যাতে সে বাসায় বীজটা বপন করে অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে চারা হওয়া পর্যন্ত প্রতিটা পর্ব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে; প্রকৃতির সঙ্গে গড়ে তুলতে পারে নির্ভেজাল সখ্য। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্কুলে ধুলাবালু মাখার জন্যও একটা দিন নির্ধারিত থাকে। সুস্থ জীবনধারার জন্য প্রয়োজনীয় নানা বিষয়ে তারা শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দেয়; প্রায়ই স্কুলের বাইরের বাস্তব জগতে নিয়ে যাওয়া হয়।

অভিভাবকদের মধ্যে যেন স্কুলের প্রতি মমতা ও দায়বদ্ধতা তৈরি হয়, এ জন্য স্কুলের বিশেষ কিছু কাজে অংশগ্রহণের জন্য অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেমন বাচ্চাদের রাস্তায় নামিয়ে ট্রাফিক নিয়মকানুন শেখানোর দিনে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনে বা স্কুলের বাগান পরিচর্যার দিনে অভিভাবকেরা আমন্ত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

জাপান:

জাপানে শিশুকে তার ক্লাসমেটদের এরিয়ার স্কুলে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। অভিভাবক যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, ক্লাসমেটদের  এরিয়ার বাইরে শিশুকে ভর্তি করানো যাবে না। সরকারি স্কুলের সব শিশুকে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। সাইকেলও ব্যবহার করা যাবে না। এখান থেকে একজন শিশুর মনে সমতা ও সাম্যের ধারণা গেঁথে যায়। শরীর সুস্থ রাখার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের প্রাথমিক অভ্যাসটিও গড়ে ওঠে। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সঠিকভাবে নিজের জুতা-মোজা পরা, দাঁত ব্রাশ করা, নিজের কাপড়চোপড় ও বাসনকোসন নিজে পরিষ্কার করা, ব্যাগ ও বই ঠিক জায়গায় গুছিয়ে রাখা, রান্না শেখা, মেহমানের সঙ্গে সঠিক সামাজিক আচরণ করা, পরোপকার করা, প্রতিদিন নিয়মিত খেলাধুলা করা, সঠিক নিয়মে রাস্তাঘাটে চলা, প্রতিবার খাবার গ্রহণের আগে তার প্রস্তুতকারী ও উৎপাদনকারীকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানানো, টয়লেট থেকে শুরু করে পুরো স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, চাষবাস শেখা ইত্যাদি নানা ধরনের কাজ শিশুদের শেখানো হয়, যা বাস্তব জীবনে কোনো না কোনো সময়ে কাজে লাগে। শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ জাগিয়ে তোলার জন্য প্রতিটা ক্লাসের আগে সেটা শেখা কেন প্রয়োজন, তা বুঝিয়ে বলা হয়।

যুক্তরাজ্য:

যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যাবস্থা উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। সেই দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বোর্ডের পরীক্ষা কর্মকর্তারাই গ্রহণ করে থাকেন। এ ব্যাপারে কোনোভাবেই শিক্ষকদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি একটি স্কুল একাধিক বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান এর যে বোর্ড কে ভালো লাগে তারা সেই বোর্ডের অধীনেই পরীক্ষায় অংশ নেয়। এতে বোর্ড গুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। ফলে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোন সুযোগ থাকেনা।

ফিনল্যান্ড

পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার শিক্ষাব্যবস্থা দেশগুলোর মধ্যে প্রধান হল ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা। বাস্তব ও বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ফিনল্যান্ড। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশটির বিশ্বসেরা হওয়ার দৌড়ে কাজ করছে গেমিং এডুকেশন বা খেলার মাধ্যমে শিক্ষা পদ্ধতি। নেই কোন পাঠ্যপুস্তকের ঝামেলা নেই কোন পরীক্ষার বালাই। ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। দুপুরের খাবার, টিফিন, বই-খাতা ,স্টেশনারি, শিক্ষাসফর এমনকি স্কুলে যাতায়াত সবকিছু বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকে। শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্ত খরচ সরকার বা রাষ্ট্র বহন করে থাকে।

আমাদের দেশে যা হচ্ছে :

  • Save

দেশের শিক্ষার অব্যবস্থা এবং এর উন্নয়ন নিয়ে পত্র পত্রিকায় বহু লেখালেখি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা প্রতিনিয়তই হচ্ছে, কিন্তু এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের বা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কোনো ভাবাবেগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা দেশের জনগণকে ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক বা আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে, তা মোটেও আমাদের সংবিধানের আলোকে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সংবিধানে বলা হয়েছে, একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করার কথা। কিন্তু আমরা সংবিধান থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। দেশে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, যা সর্বজনীন নয়।

চলতি বছর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা উপকরণের ব্যয় বেশি হওয়ায় দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। শুধু তাই নয়, নতুন কারিকুলামে বাচ্চাদের যা শেখানো হচ্ছে, তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সরকারের খোদ কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, এই শিক্ষা কারিকুলাম মানসম্পন্ন বা উপযুক্ত নয়। অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজ ছাড়াও ‘সম্মিলিত বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ জানালেও তা আমলে না নিয়ে এই কারিকুলাম ইতিমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে বলে জানা যায়। বিগত ১০ মাসের বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, গ্রামের স্কুলগুলোতে এই শিক্ষাক্রম পুরোটাই অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য অভিভাবক, ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহলে জোর দাবি উঠেছে। এই শিক্ষাক্রম প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে অন্যান্য শ্রেণিতে চালু করা হবে বলে জানা যায়। নতুন কারিকুলামে স্কুলগুলোতে ভাত, ডিম, শাক ইত্যাদি রান্না শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে। এসব উপকরণ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব রান্নাবান্ন তো ঘরেই মায়েরা শেখাতে পারেন। এগুলো শেখার জন্য স্কুলের প্রয়োজন নেই। এর জন্য প্রতিদিন শিক্ষা উপকরণগুলো ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। এই অপ্রোয়জনীয় বাড়তি ব্যয় অভিভাবকেরা কেন বহন করবেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন অভিভাবক বলছেন, আমি কি আমার ছেলেমেয়েকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে হোটেলের বাবুর্চি বানাব? একটা শ্রেণিতে জীবনমুখী একটি বিষয় থাকলেই যথেষ্ট। বিতর্কিত এই কারিকুলাম পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগে এটার ওপর যথাযথ জরিপ ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জোর দাবি জানাচ্ছি। যে শিক্ষা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বা করছে, তা কেন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে? এমনিতেই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মানসম্মত না হওয়ায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম শিক্ষিত হচ্ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে। ভূরিভূরি জিপিএ ফাইভ পেয়ে বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ভালো ভালো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ছুটছে। মা-বাবাও সন্তানদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছেন, কিন্তু সত্যিকার মানুষ হিসেবে কজন বেরিয়ে আসছে? পরিবেশ, স্বাস্থ্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রেখে রান্নবান্না শেখানো হচ্ছে, যার কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমাদের অভিভাবকেরাও একটা ভালো রেজাল্ট, একটা ভালো সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন, সন্তানদেরও সেই শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা সত্যিকার অর্থে জ্ঞান অর্জন করছেন কি না, তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ বা গুনাবলি তৈরি হচ্ছে কি না, সেটা দেখার বা বোঝার মতো সময় বা মাসসিকতা আমাদের অনেকেরই নেই। আমরা সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম, অব্যবস্থা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নষ্ট রাজনীতির জাঁতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছি। এই অবস্থা বা পরিবেশের মধ্য থেকেও আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে বাবা-মায়ের সুষ্ঠু তদারকিতে সত্যিকার অর্থে জ্ঞান অর্জন করে বেরিয়ে আসছে, কিন্তু তাদের সেই মেধার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় এবং দেশে মেধাবীদের যথাযথভাবে কাজে না লাগানোর কারণে অনেকে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। এর ফলে দেশ তার মেধাবী, যোগ্য, দক্ষ ও জ্ঞানী সন্তানদের হারাচ্ছে। সবশেষে বলতে চাই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে করতে হবে কর্মমুখী ও জীবনমুখী। কর্মমুখী শিক্ষার ভিত গড়ার জন্য কারিগরি শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা দুটির ওপরই সমান জোর দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষার সবটাই ব্যাবহারিক শিক্ষামুখী হতে হবে, সেই সঙ্গে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। শিক্ষা হতে হবে মানবিক গুণাবলি উদ্রেক করা জীবন ও কর্মমুখী প্রকৃত জ্ঞানার্জনের শিক্ষা। শিক্ষার পরিবেশ সুস্থ, সুন্দর ও বাস্তবধর্মী করার জন্য এই খাতের বাজেট বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের সমস্যাগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করে, শিক্ষক, অভিভাবকসহ রাষ্ট্রকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা উন্নত দেশের অনেক কিছুই অনুকরণ করি, কিন্তু তাদের শিক্ষাব্যস্থাকে অনুসরণ করছি না। জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা, ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা সন্তানদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ এবং অন্যতম সেরা শিক্ষাব্যবস্থা। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম তথা পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের মানসম্পন্ন বেতনকাঠামো প্রণয়ন এবং প্রকৃত মেধাবী ছেলেমেয়েদের এই পেশায় নিয়োজিত করে মানসম্পন্ন শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া উন্নত জাতি গঠন তথা টেকসই উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।

 

শিক্ষা একটা জাতির মেরুদণ্ড। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উন্নত জাতি গঠনের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। শুধু তাই নয়, সভ্যতা বিকাশের শক্তিও এই শিক্ষা—এটা আমরা সবাই জানি। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে দেশ বা যে জাতি যত বেশি এগিয়ে, সেই দেশ বা জাতি তত বেশি  উন্নত। মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া উন্নত জাতি গঠনের আশা অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয়। উন্নত মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটা দালানের ভিত মজবুত না হলে যেমন দালানটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার ভিতটা মানসম্পন্ন ও মজবুত না হলে সেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শিক্ষার ওপর আয়োজিত একটি বিশেষ সম্মেলনে বলেছেন, একটি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা। বড় সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের পরিবর্তে এটা দ্রুত বিভাজন তৈরি করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি শিক্ষার ওপর একটি ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। দরিদ্র ছাত্রদের প্রযুক্তির অভাব থাকা একটি বিশেষ অসুবিধা এবং যুদ্ধসমূহ স্কুলগুলো শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো ব্যাহত করছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমস্যা দেখা দিলেও সব দেশের প্রতি শিক্ষার ব্যয় বাড়ানোর অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর সামাজিক প্রতিবন্ধকগুলো ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে শিক্ষার অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা থাকলেও ন্যায্যতা ও প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কোনোভাবে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের উপযোগী নয়।

যদি আমাদের দেশে সুষ্ঠু ‍কোন মানবন্টন যদি তৈরি সম্ভব না হয়, তবে উন্নত দেশগুলোর অনুসরণ করে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করা শ্রেয় বলে ‍আমি মনে করি।

মুক্তা আক্তার

ডে নিউজ  বিডি