ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানি; যাত্রাবাড়ী ও দক্ষিণখান থানার ওসিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন এক নারী। বুধবার ( মার্চ) নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জয়শ্রী সামদারের আদালতে তিনি মামলাটি করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। মামলার অপর আসামিরা হলেনমো. সোহেল, মো. মিরাজ আলী, মো. জিহাদ এবং ওসমান আলী (এসআই)

বাদীর আইনজীবী জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় আসামি সোহেল মিরাজ বাদীর স্বামীকে খুঁজতে বাদীর বাসায় আসে। এরপর তারা স্বামীকে না পেয়ে বাদীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সময় বাদী আত্মরক্ষার জন্য চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আসেন। এরপর আসামিরা বাসা থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় সিঁড়িতে বাদীর স্বামীকে দেখামাত্র আসামি সোহেল, মিরাজ জিহাদ তার স্বামীকে মারধর এবং অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। বাদী এবং তার সন্তানদের বাসায় আটক করে রাখেন।

অপরদিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেনসহ ১০ পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বুধবার ( মার্চ) ঢাকার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক সামসুন্নাহারের আদালতে মামলাটি করেন ৪৩ বছর বয়সী এক নারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলো, দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো.শামীম হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির, আরিফ হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. . রুপ, নুরুল ইসলাম, কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম, জয়েন উদ্দিন, মো. তৌফিক, রুনা আক্তার ইয়াসমিন আক্তার এবং সৎমা মার্জিয়া আক্তার (পুতুল) মামলার বাদীর আইনজীবী ইমরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদীর সঙ্গে তার সৎমায়ের ছেলে ইকবাল হোসেনের (সজল) জমিজমা নিয়ে মামলামোকদ্দমা চলছে। সম্প্রতি আদালত মার্জিয়া আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এটা জানতে পেরে বাদী তার পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য ফ্ল্যাটে ছুটে যান মার্জিয়া।

জানা যায়, ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন মামলা সম্পর্কে অবগত থাকা অবস্থায় মার্জিয়ার কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে বাদীর বাসায় দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। ওসি বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদীর পোশাক খুলে বিবস্ত্র করে বুকে, পেটে, যৌনাঙ্গে চাপাচাপি করে লাঞ্ছিত করে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এসআই আবদুল কাদির বাদীকে নির্যাতন করে। ওসি সেখানে উপস্থিত এক সাক্ষীকেও শ্লীলতাহানি করে। বাদী এবং সাক্ষীকে তখনই বের হয়ে যেতে বলেন ওসি। বের না হলে তাদের গণধর্ষণের হুমকি দেয়। সময় বাদীর ১১ বছরের কন্যা চিৎকার করলে ওসি মামলার তিন নম্বর সাক্ষীর গালে থাপ্পড় মেরে রক্তাক্ত করে। বাদীর স্বামী নং সাক্ষীর স্বামী মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকাবস্থায় ওসির নির্দেশে অন্য পুলিশ সদস্যরা তাদের মোবাইল কেড়ে নেয় এবং মারধর করে।

তিনি বলেন, ‘পরেরদিন সকালে আসামিরা বাদীকে বলে, তার স্বামী অজ্ঞাত স্থানে আছে। সেখান থেকে যেন তার স্বামীকে নিয়ে আসে। আসামিদের কথা অনুযায়ী, অজ্ঞাত স্থান থেকে তার স্বামীকে নিয়ে আসেন বাদী। এরপর এসে দেখে বাদীর সন্তানদেরও আটক করে রাখেন আসামিরা। পরবর্তীতে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এসে বাদীর সন্তানদের উদ্ধার করে। তবে আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি এসআই মামলা না নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তাদের কথা অনুযায়ী হাজার টাকা দেন বাদী। এরপর বাদীকে বলেন, বাকি ৯৫ হাজার টাকা  দিলে মামলা নেয়া হবে। পরবর্তীতে বাদী আর টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। এরপর বাদীর মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানা আর নেয়নি।