কেন শিক্ষিত হওয়ার পরও বেকার?

কেন শিক্ষতরাই বেকার হয় ?
কেন শিক্ষতরাই বেকার হয় ?

বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় শিক্ষার মাধ্যমে মানবকে সম্পদ বানানোর পরিবর্তে গাধার মনুষ্য প্রজাতি তৈরি হচ্ছে। (যদিও গাধা অনেক কর্মঠ)।

আমরা বাংলাদেশিরা একটি Build-in চিন্তা ভাবনা নিয়ে জন্মাই। উদ্ভাবনী কাজের তুলনায় ডেস্কের পিছনে বসে ডেস্কের নিচ দিয়ে আয় করা আমাদের পছন্দের পেশা।

সংসদে সাংসদ রুমিন ফারহানার একটি অসাধারণ বক্তব্য দেখলাম বেকারত্ব এবং বেকারত্ব সৃষ্টিতে শিক্ষিতদের ভূমিকা। কথাগুলো অতন্ত চমৎকার এবং আমাদের শিক্ষামন্ত্রীও একমত প্রকাশ করেন।

শিক্ষতরাই বেকার হয়। অল্প শিক্ষতরা কখনোই বেকার হয় না অথবা থাকে না, হয়তো তারা কম উপার্জন করে কিন্তু নিজেদের উপার্জনের রাস্তা নিজেরাই তৈরি করে নেয়। বিসিএস না হলে তো ঠুকরাকে মেরা পেয়ার মেরা ইনতেকাম দেখেগি গানও বাজবে না ব্যাকগ্রাউন্ডে।

অনেকেই মনে করেন ডেস্কে বসে কাজ করাটাই সম্মানের। অন্য কাজ সম্মানের নয়। কিন্তু বিদেশে গিয়ে যে কোনো কাজ করতে আমাদের আটকায় না। আমাদের এ মনমানসিকতা বদলাতে হবে…

৮ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ৩০ টাকার চাকরি পাওয়াকে সমাজ নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলে, ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা কামানো নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোকে সমাজ ” কিছু করতে না পেরে এখন এইসব করে” বলে। দেশে স্টার্টআপ বলে কোন শব্দই প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।

প্রমাণ চান? নিনঃ

ঘটনা ১ঃ

এই বছর শীতকাল শেষ হওয়ার পর এবং গরম শুরু হওয়ার পূর্বে বাসায় এসি পরিষ্কার করার জন্য একজন এসি পরিষ্কারকের থেকে বুকিং নেওয়া হয়েছিলো, ১১ দিন পর সে আমাদের সময় দিয়েছিলো। দু’জন ব্যক্তি ১ ঘন্টার জন্য ১২’শ এবং গাড়ি ভাড়া ৩শ টাকা= ১৫’শ টাকা নিয়েছিলো। তারা নাকি দিনে সর্বোচ্চ পাঁচটি এসি পরিষ্কারের বুকিং রাখে। অর্থাৎ, ১৫’শ× ৪ = ৬ হাজার টাকা! প্রতিজন গড়ে ৩ হাজার টাকা রোজগার করে। দিনে যদি ২ হাজার করেও ধরি তাহলে প্রতিজন মাসে ৬০ হাজার টাকা উপার্জন করে এবং দু’জনের বয়সই ২০-২২ এর মধ্যে হবে। তারা কেউ ডিগ্রীধারী নন।

ঘটনা ২ঃ

আমার এক পরিচিত জনের বিয়ের জন্য ফটোগ্রাফার ঠিক করা হয়েছিলো, কথা ছিলো ছবি এবং ভিডিও করবে। তার শিডিউল ছিলো দুপুর ১টা থেকে ঠিক বিকাল ৫টা, কারণ সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত তার আরেকটি প্রোগ্রামে ফটোগ্রাফির চুক্তি আছে। মাত্র ৪ ঘন্টার জন্য তার সাথে চুক্তি ছিলো ৪৫ হাজার টাকার! অর্থাৎ মাত্র একদিনে সে ৯০ হাজার টাকার কাজ করবে, সাথে তার এক এসিস্ট্যান্টও আছে। ছবি তোলার তার সব খরচ এবং এসিস্ট্যান্টকে দিয়েও অন্তত তার লাভ ৫০ হাজার টাকা। এখন সে যদি মাসের প্রতিদিন কাজ না-ও করে, মাসে ১০ দিনও কাজ করে একটি করে তার মাসে রোজগার অন্তত ২ লাখ টাকা! তার বাবা-মা নাকি মানুষদের তাদের ছেলে ইন্জিনিয়ারিং পড়ে এসব করে বলতে লজ্জা পায়।

এখন খেয়াল করে পড়লে দেখবেন এখানে ৪জন ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে, বেশ ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে, কিন্তু আমাদের সমাজ এবং পরিবারে এই কাজগুলোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, সম্মান তো তেমন পায় না বলাই যায়। অথচ এরা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরা তৈরি করেছে, অন্যদের কর্মসংস্থান দিয়েছে, যে বয়সে অনেকেই (যেমন আমি)পয়সার জন্য পিতামাতার জন্য হাত পাতে, আরো কয়েকবছর পর্যন্ত অগণিত টাকা খরচ করে জুতার তলা সেলাই করতে।

সমাজ কি মেনে নিবে একজন মাস্টার্স করা মেয়ে হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করছে (যদি না কোটি টাকার উদ্যোক্তা হতে পারে)? উত্তরটি হলো, না।

অনার্স, মাস্টার্স করে কোন ব্যক্তি যদি কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় সংবাদমাধ্যমগুলো এমনভাবে প্রচার করে যেন কোন বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে, অদ্ভুত কোন কাজ করছে! অথচ কৃষিপ্রধান দেশ আমাদের। অর্থাৎ, শিক্ষিত একজনের জন্য টেবিলের বাইরে করা যেকোন কাজ রীতিমতো নতুন, অদ্ভুত হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে কৃষিকে ফুলটাইম পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া অতি সাধারণ বিষয়। আমাদের দেশে ৫ হাজার শিক্ষার্থী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কৃষি অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের ২০০ চাকরিপদে লড়াই করতে।

ঘটনার সংখ্যা কিন্তু এখানেই থেমে নেই।

ঘটনা ৩ঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে সনামধন্য গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাওয়া একজনকে চিনি। প্রাথমিক স্তরেই তার বেতন ৫০+, সাথে কোম্পানি থেকে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা, চাকরির ৬ মাস পূর্ণ হলে কোম্পানির কোয়ার্টারে বাসা পাবে। তার বাবা কিছুতেই ছেলেকে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতে দিবে না, এতো ভালো ফলাফল নিয়ে বেসরকারি চাকরি করবে মানতে পারেনি। চাকরিতে একবার প্রবেশ করলে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করবে না, পড়াশোনা বন্ধ করে দিবে, বাবার এই যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে হাতে চাকরিতে যোগদানের চিঠি পেয়েও যোগ দিয়ে পারেনি। আজকে তিনবছর ধরে বাংলাদেশের আরেক মাথা থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা আসে কোন না কোন চাকরি পরীক্ষা দিতে৷ সরকারি চাকরির বয়স শেষের পথে, তার এখন পিয়নের পদ হলেও একটি চাকরি লাগবে।

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি একটি Badge of Honour, সরকার যে একজন ব্যক্তিকে চাকরি দেয় জনগণকে সেবা দিতে সেটার জন্য কেউ চাকরি চায় না। গাড়ির আগে পিছনে সরকারি ট্যাগের জন্য একটা চাকরির প্রয়োজন। বছরের পর বছর একটি সরকারি চাকরির জন্য মানুষ পাগলের মতো ঘোরে, ফলে ৩০-৩২ বছর বয়সেও অনেকে বেকার উপাধি নিয়ে ঘুরে।

এখন বলুন, শিক্ষিতরা বেকার থাকবে না কেন?