রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখার জন্য সুস্থ থাকাটা অতি জরুরি। কিন্তু ইফতার বা সেহরির খাবার বা পানীয় বাছাইটা যদি ভুল হয়, তাহলে অনিশ্চয়তা থেকে যায় যে আপনি কতখানি সুস্থভাবে রোজা রাখবেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজাদারদের ইফতারের খাদ্য তালিকা ঠিক করতে হবে খুব বিবেচনা করে। কারণ সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারেই প্রথম খাবার খেতে হয়। ইফতারে উল্টা–পাল্টা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিয়ে পারে।
বিশেষ করে ইফতারে ভাজা খাবারের পরিবর্তে পানীয় এবং ফলমূল বেশি করে রাখতে হবে।
চলুন কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় সম্পর্কে জানা যাক যেগুলো ইফতারে খুবই উপাদেয় হবে।
১. ইসুবগুল ও তোকমার শরবত
এক টেবিল চামচ তোকমা ভিজিয়ে রেখে তার সঙ্গে এক চামচ ইসুবগুল ও সামান্য মধু বা গুড় মিশিয়ে ঘরে তৈরি করা যায় এই তরলটি। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও এসিডিটি প্রতিরোধে খুবই উপকারী।
২. লেবু ও মধুর শরবত
লেবু স্বাদমতো ও এক চা চামচ মধুর মিশ্রণে তৈরি হালকা রংবিহীন এই তরলটি শরীরকে চাঙ্গা করতে বা বিপাকের প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে সাহায্য করে থাকে। প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পানীয় হিসেবে পাওয়া যায় এই তরল।
৩. ডাবের পানি
এই স্বচ্ছ পুষ্টিকর তরলটির সঙ্গে আর কোনো তরলের তুলনা হয় না। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই তরলের জুড়ি নেই। মাংসপেশির সুরক্ষায় ডাবের পানি অনেক সাহায্য করে। যে কেউ এই তরলটি পান করতে পারে। তবে যাদের এসিডিটি রয়েছে, তারা কিছু খেয়ে এর সঙ্গে খেলে এসিডিটি নাও হতে পারে।
৪. আখের গুড়ের শরবত
ঘরে তৈরি এই তরলটি আপনাকে শক্তি সরবরাহ করার পাশাপাশি আয়রন, পটাশিয়াম ছাড়াও নানা মিনারেলস প্রদান করবে। এটি আপনাকে অনায়াসে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করবে।
৫. লাচ্ছি
দইয়ের লাচ্ছি ঘরে তৈরি করলে তার কোনো তুলনাই নেই। যারা ওজনাধিক্যে ভুগছে বা যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা লেবু ও লবণ দিয়ে লাচ্ছি খেতে পারবে। মিষ্টি লাচ্ছি গর্ভবতী মা, অল্প বয়সী যারা রোজা রাখছে এবং যারা কর্মজীবী, তাদের জন্য অনেক উপকারী তরল। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই তরলের জুড়ি নেই।
৬. ঘরে তৈরি ফলের রস
ইফতারে মৌসুমি ফলের রস ঘরে তৈরি করে খেলেও ফলের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় অনেক সাহায্য করে থাকে। কিছুটা আঁশ নষ্ট হলেও শরীরকে চাঙ্গা ও সতেজ রাখতে ফলের রস বা জুস অনেক উপকারী। কাঁচা আমের জুস, বেলের শরবত, দুধ ও কলার সেক, মাল্টার জুস, আপেলের জুস, আনারস বা তরমুজের জুস আপনাকে এই রোজায় রাখবে প্রাণবন্ত।
রঙিন, প্যাকেটজাত তরল নয়, ঘরেই তৈরি করুন সুস্বাদু তরল, যা আপনাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি দেবে মানসিক প্রশান্তি। তাই ঘরে তৈরি তরল পান করুন এবং পুরো রোজা সুস্থভাবে শেষ করুন।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।