ব্রহ্মপুত্র সেতুর মাটি পরীক্ষা শুরু হয়েছে

চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র সেতু হতে পারে দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগের জন্য হার্ট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: দেশের সবচেয়ে বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রে একটি সেতু হলে দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা দুয়ার খুলে যাবে। এই সেতু নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের জন্য হার্ট হিসেবে দেশের অর্থনীতি আমুল পরিবর্তন ঘটাবে। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানী একমাত্র যমুনার নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সেতুর উপর ৬০/৭০ভাগ পরিবহন চাপ কমে আসবে। এই সেতুর উপর দিয়ে বাইপাস রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করাও সম্ভব। ঢাকা,ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভৈরবের সাথে উত্তরাঞ্চলের বহুমুখি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এতে মানুষের সময়,অর্থ ব্যয় কমে আসায় দেশের অর্থনীতির চাকায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে ব্রহ্মপুত্র সেতু। সেতুর মাটি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চিলমারী নৌবন্দর, কুড়িগ্রাম, সোনাহাট স্থলবন্দর, নীলফামারীর চিলাহাটি বন্দর,পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা বন্দর, লালমনিরহাটে বুড়িমারী বন্দর এবং দিনাজপুরের হিলি বন্দর সাথে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমুল পরিবর্তন ঘটবে। ব্রহ্মপুত্র সেতু হলে উত্তরবঙ্গের রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নিলফামারী, লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলার সাথে রাজধানীর দুরত্ব প্রায় ৬/৭ঘন্টা কমে আসবে। ফলে ঢাকার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে সম্ভাবনাময় ব্রহ্মপুত্র সেতু। এই সেতু দিয়ে গ্যাস সংযোগ তৈরি করা গেলে দেশের দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রামে কল-কারখানার পাশাপাশি বাড়বে ব্যবসার পরিধি।

ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু হলে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও এই সেতুর গুরুত্ব বাড়বে। কেননা ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যসহ নেপাল এবং ভুটানের টানজিট রুট হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হয়ে আন্ত:দেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের চলাচল ও মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প-কারখানা গড়ে উঠায় জীবন মানের পরিবর্তন ঘটবে। ফলে ২০৪১সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশের কাতারে সামিল হতে ব্রহ্মপুত্র সেতু গুরুত্ব বহন করে।

চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের নদী বন্দর এলাকার মো:আবু জেয়াদ আজাদ বিপ্লব বলেন,ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু হামার খুব দরকার। এই সেতু হলে হামারা নদী ভাঙ্গন রোধ হবে। মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করবার আসবে। হামার কাজের সুযোগ তৈরি হবে। শ্রমিক বাদশা আলমগীর বলেন,হামার অভাবী এলাকা। সারাবছর কাজ থাকে না। তাই জেলার বাইরে কাজ করার জন্য যেতে হয়। বর্তমানে ঢাকা,সিলেট যেতে দেড় হতে দু’হাজার টাকা খরচ আর সময় নাগে ১৪/২০ঘন্টা। ব্রহ্মপুত্র সেতু হলে এই এলাকার ভাগ্য ঘুরে যাবে।

আনিছুর রহমান বলেন,ব্রহ্মপুত্র নদের সেতু না থাকায় কুড়িগ্রাম-রংপুর-বগুড়া হয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যেতে ১৫-২০ ঘন্টা ব্যয় হয়। অন্যদিকে রৌমারী শেরপুর-জামালপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ যেতে ৫ থেকে ১২ঘন্টা সময় লাগে। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে সময় এবং অর্থনৈতিকভাবে সকলেই লাভবান হবে।

রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা মোজ্জাম্মেল হক বলেন,জেলার সাথে রৌমার-রাজিবপুর ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা আলাদা। এখানে কেউ অসুস্থ হলে নৌকা ভাড়া করে রোগী নিয়ে যেতে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর অফিস-আদালতে কাজের জন্য গেলে সিরিয়ালের নৌকা না পেলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। একদিন আগে গিয়ে কুড়িগ্রামে থেকে পরের দিন কাজ শেষ করে ফিরতে হয়। হামার এখান থেকে ঢাকা যাওয়া সহজ। কিন্তু কুড়িগ্রাম যাওয়া কঠিন। শিক্ষার্থী নয়ন মিয়া বলেন,জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় অভাবী এলাকার অনেক ভাল শিক্ষার্থীদের ম্যাসে থেকে পড়াশোনার সামর্থ্য থাকে না। ব্রহ্মপুত্র সেতু হলে দিনে গিয়ে দিনেই আসা সম্ভব।

গত বছরের নভেম্বর মাসে সেতু কর্তৃপক্ষের গঠিত একটি টিম অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক ড. মনিরুজ্জামান(পিএনডি), সেতু কর্তৃপক্ষের সদস্য ও প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত আলী, সেতু বিভাগের সদস্য ও উপসচিব(বাজেট) আবুল হাসান ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাই করেন। পরিদর্শনে ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, রৌমারী উপজেলার বলদমারা হতে চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট পয়েন্ট দৈর্ঘ্য ৯কিলোমিটার। এবং চররাজিবপুর হতে চিলামারী দৈর্ঘ্য ১৩কিলোমিটার দুটি অ্যালাইমেন্ট র্নিধারণ করে। এরমধ্যে বলদমারা হতে ফকিরের হাট অ্যালাইমেন্টে ২দশমিক ৩ কিলোমিটার আয়তনের দুইশ বিঘার চর এবং আড়াই কিলোমিটার আয়তনের বাঘুয়ার বাঁশদহের চর প্রায় ৩০বছরেরও আগে গঠিত হয়। পানির লেভেল হতে ৮/১০ফুট উপর চর দুটি অবস্থিত। এখানে সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশ ভায়াডাক্ট এবং ৪ দশমিক ২০কিলোমিটার জলভাগের অংশে ক্যাবল স্ট্রেইট সেতু নির্মাণের জন্য সাশ্রয়ী ও যুক্তিযুক্ত বলে করেন। এরই মধ্যেই চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট এলাকায়। সেতুর মাটি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক ড.মনিরুজ্জামান (পিএনডি)বলেন, ব্রহ্মপুত্র সেতুকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে বলেন,এই এলাকায় সেতুটি নির্মাণ করা গেলে মানুষের উন্নয়ন গুরুত্ব বহন করে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি এবং আমাদের মতামত কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো। এখানে আরও বিষয় আছে ডিটেইলস সার্ভে,অর্থনীতি,পরিবেশগত বিষয় আছে। এগুলো দেখে একটা সিদ্ধান্তে যাবো।

এই বিষয়ে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের দেশে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু নির্মাণ অসম্ভব না। প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামবাসীকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। দেশের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প হলে ব্রহ্মপুত্র সেতু প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে আমার বিশ্বাস

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে ৪টি সমঝোতা স্মারক সই