৩৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্বে মাত্র ২৩ কর্মকর্তা!

দেশের ৩৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্বে আছেন ২৩ কর্মকর্তা। এর মধ্যেই গত দেড় মাস ধরে সব ধরনের পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ। ফলে পরিদর্শনের জন্য বার্ষিক যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানটিরই প্রধান কাজ দেশের সব ধরনের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা নিয়মিত পরিদর্শন করে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্বচ্ছ শিক্ষা প্রশাসন গঠনে সহায়তা করা। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা। এছাড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন তদন্ত কার্যক্রমও পরিচালনা করার কথা সংস্থার কর্মকর্তাদের।

কিন্তু সংস্থার দুরবস্থা দেখে মনে হয় মন্ত্রণালয়ের কাছে সংস্থার গুরুত্ব অনেক কম। শিক্ষা ভবনের একটি ফ্লোরে মাত্র কয়েকটি কক্ষ রয়েছে সংস্থাটির। কর্মকর্তাদের বসার জায়গা নেই। রুমের বাইরে বারান্দায় আলমারি সাজানো। সাজানো আছে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) একটি ফ্লোরে কর্মকর্তাদের জন্য নতুন করে অফিস তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।

বছরে ৩ হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিমাসে ২৬০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু গত দুই মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় শূন্য। ফলে বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

সংস্থাটির প্রথম শ্রেণির ৩৫টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১২টি পদ। পরিদর্শনের জন্য মাত্র ২৩ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। দেশে ৩৬ হাজার ৭০০ প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমান জনবল দিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও একটি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বার পরিদর্শন ১০ বছরেও শুরু করা সম্ভব নয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ কারণে বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সৈয়দ অলিউল্লাহ মো, আজমতগীর বলেন, জনবল সংকট রয়েছে। এ কারণে পরিদর্শন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার কারণে পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ আছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনবল সংকটের কারণ সত্য হলেও এসএসসি পরীক্ষার কারণে পরিদর্শন করা যাবে না এ ধারণা ঠিক নয়। এখন কলেজে কোনো পরীক্ষা নেই। এছাড়া সব মাধ্যমিক স্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্র নেই। যেখানে কেন্দ্র নেই ও কলেজের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদন্ত ও পরিদর্শনে একটি অটোমেশন সফটওয়্যার রয়েছে। আছে পিয়ার ইন্সপেকশন সফটওয়্যারও। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম সহজীকরণসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু এ সফটওয়্যারের পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ডিএআই একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। তদন্ত কার্যক্রমের নিয়ম ও প্রতিবেদন তৈরিসহ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম আয়ত্ত করতে একজন কর্মকর্তার এক বছরের বেশি সময় লাগে। মধ্যম পর্যায় থেকে শীর্ষ পদ পর্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ার কারণে কার্যক্রমে স্থবিরতা আসছে বলে জানান তারা।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ১৯৭৯ সালে কাজী আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে গঠিত। কমিটির উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাখাত পরীক্ষা করা এবং উন্নতির জন্য সুপারিশ সরবরাহ করা। ১৯৮০ সালে সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ তৈরি করে। এটি স্কটল্যান্ডের হার্জেস্টি ইন্সপেক্টর অফ এডুকেশনের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্থাটি এখন তার গতি হারিয়েছে। (খবর : দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০)