চাঁদপুরের ২৬ বছর বয়সী কনিষ্ঠ চেয়ারম্যান সউদ আল নাসের ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন। ৫ জানুয়ারির পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে চাঁদপুরের ২৯টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জের ১৩টি এবং হাইমচরে ৪টি এবং ১২টিতে কচুয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক ধারণা মতে-হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নে ২৬ বছর বয়সী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন সউদ আল নাসের।
তাঁর বাবার নাম মরহুম আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন সরদার। তিনি ছিলেন পোড় খাওয়া এক আওয়ামী লীগ নেতা।তিনিও তাঁর সময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি এ উপজেলার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং নীলকমল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াবন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম আলহাজ¦ নাসির সরদার দু-দু’বার নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সউদ আল নাসের ১৯৯৪ সালের ২২ ডিসেম্বর নীলকমলের বর্তমান ঈশানবালায় জন্মগ্রহণ করেন। বাড়ির পাশের চরকোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল থেকে ৫ম, এমজেএস নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে তিনি ঢাকার মিরপুর প্রি-কেডেট স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। ২০১০ সালে মিরপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর মিরপুর বাঙলা কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন।
পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে তিনি গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারই আপন জেঠত ভাই সালাউদ্দিন সরদারকে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেন। বয়স ও পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে তিনি গত ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সালাউদ্দিন সরদারকে মনোনীত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানান। নির্বাচনে সালাউদ্দিন সরদার গতবার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন্।
ইতিমধ্যেই সময়ের ব্যবধানে তাদের পারিবারিক অসন্তোষ, মামলা-হামলা, দ্বন্দ্ব ,সংঘাত ও এক পর্যায়ে ১২ থেকে ১৩টি মামলা মোকাবেলা করতে হয় তাকে। এতে তাকে অর্থহীন হয়ে সংসার ও ব্যবসা চালানোর স্বাভাবিক পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তবুও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াননি। এ সব কারণে এলাকাবাসীও বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং নানাভাবে বিচলিত হন। দু’ চাচতো-জেঠত ভাইয়ের এ দ্বন্দ্বে গোটা সরদার পরিবারটিও দু’’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
এদিকে তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ থেকে বহিস্কারও করা হয়। ফলে তিনি হয়ে গেলেন তথাকথিত আনারস প্রতীকের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে নীলকমলবাসীর নানা চাপে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ায় সউদ আল নাসের কঠিন চ্যালেঞ্জ এর মুখামুখি হন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণে অটল থাকেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিটি মুহূর্ত তাকে নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতা, কর্মী নির্বাচন, নির্বাচনি প্রতিদিনের গণসংযোগ এক নিদারুণ অর্থ সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। তবুও প্রশাসন ও নীলকমলবাসীর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ ছিলেন।
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিন কাটিয়েছেন। ভোটারদের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট ভিক্ষা চেয়ে বেড়িয়েছেন। ফলে জনতা তাদের মনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ‘ মানুষের গলায় ব্যাচ ছিল এক প্রার্থীর ; অথচ ভোট দিয়েছেন বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে।’ এটা ছিল আধুনিক এ যুগের নির্বাচনের নতুন একটি অধ্যায়। যা অতীতে ছিল না।
মানুষের ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তায় তথাকথিত বিদ্রোহী আনারস প্রতীক নিয়ে জনগণ ও প্রশাসনের মুখ্য ভূমিকায় সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ হাজার ৩ শ ৮ ভোট পান। ২ হাজার ৩ শ ১৪ ভোটের ব্যবধানে তিনি ৪নং নীলকমলের জনতার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এতে চাঁদপুর জেলার ২৬ বছর বয়সী কনিষ্ঠ চেয়ারম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। নীলকমলের ছিল ভোটার ১৩ হাজার ১শ ৪৪ জন। ভোট কেন্দ্র ছিল ৯টি এবং বুথ ছিল ৩৮টি। ঈশানবালার ৩নং ওয়ার্ডে উভয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বাড়ি ছিল।
তিনি ১৫ জানুয়ারি এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেন, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারায় তিনি জয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেন। তাই তিনি প্রশাসন ও ভোটারদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।