তিন দফা দাবিতে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

তিন দফা দাবিতে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীরা তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আবার আন্দোলনে নেমেছেন। শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে শতাধিক ছাত্রী হল থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নেন। এরপর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করেন।

এ সময় ছাত্রীরা সড়কের চারপাশে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে অবরোধ তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁরা তিন দফা দাবিতে স্লোগান দেন। দাবিগুলো হলো সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ।

আন্দোলনরত ছাত্রীরা গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আজ সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে তিন দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। কয়েকজন ছাত্রী বলেন, সন্ধ্যা সাতটার আগেই তাঁরা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়েছেন। সাতটা পর্যন্ত তাঁরা দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কী উদ্যোগ নিয়েছে, এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রীরা সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনরত ছাত্রীরা। সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষ (কক্ষ নম্বর ১০৭) ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের কক্ষে (কক্ষ নম্বর ১০৮) দরজায় বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত পোস্টারও সাঁটিয়ে দেন ছাত্রীরা।

ছাত্রীদের আবার আন্দোলনে যাওয়ার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার যেখানে ছাত্রীদের সব সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। আমরা ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাব।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে সিরাজুন্নেসা হলের কয়েক শ ছাত্রী প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে উপাচার্য ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলে রাত আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ স্থগিত করে তাঁরা হলে ফেরেন। গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে।

বৈঠকে ছাত্রীরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে বেলা একটার দিকে উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি দাবি করে আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বিকেল চারটার দিকে ছাত্রীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের দাবি মানতে আজ সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।

এদিকে গতকাল বিকেলে ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে যোবাইদা কনক খানকে হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আন্দোলনের বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গতকাল বলেন, প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় হলে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তাঁদের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।

হল প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগ এনে পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্রীদের চতুর্থ দিনের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের পাশের এক কিলো সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা । এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ সকল যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।

আন্দোলনের মুখপাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রশাসন এখন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন চলবে। তারা বলেন, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দিয়ে সকল ধরণের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তিন দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে বেধরক মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

দায়িত্বহীন প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ , অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা নির্মূল, সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা ও অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব এবং দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দিতে হবে এই তিনদফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চতুর্থ দিনে গড়াচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসন থেকে এখনো কোনো সুষ্ঠু সমাধান আসেনি বলে জানান শিক্ষার্থী।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। নিজ বাসভবনে ফেরার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে। ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার বিকেল ৩টায় এ ঘটনা ঘটে।