এই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না গণ অধিকার পরিষদ : নুরুল হক নুর

শুক্রবার সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তাই এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণ অধিকার পরিষদ অংশ নেবে না।

এ সময় নুর আরও বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিলগ্ন পার করছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পথে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করা। কিন্তু আমরা সমাজে বৈষম্য নিরসন করতে পারি নাই। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারি নাই। বরং আজকে জনগণ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করেছি। কারণ আমরা দেখেছি ইতিহাসের প্রত্যেকটি বাঁকে বাঁকে তরুণেরাই সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে এবং সেই বাঁক থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছে। আজকে জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত, জনগণ শোষিত, নিপীড়িত এখান থেকেও তরুণেরাই জাতিকে মুক্ত করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে নিয়েই আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি যার নাম গণ অধিকার পরিষদ। আজকে এই জাতীয় স্মৃতিসৌধে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা শুরু করেছি।

আগামী নির্বাচনে এই গণ অধিকার পরিষদকে গণ মানুষের দলে পরিণত করে প্রত্যেকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমরা কাজ করছি এবং আমাদের বিশ্বাস তিনশ আসনেই আমরা প্রার্থী দিতে পারবো। আমাদের ছাত্র, যুব, পেশাজীবী, নারীসহ পাঁচটি সংগঠন ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জেলা লেভেলে তাদের কমিটি আছে। এখন আমরা সকল অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুতসময়ের মধ্যে আমাদের দলের কমিটি দিয়ে দিবো এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনশ আসনে প্রার্থী দেবেন বলেও জানান তিনি।

নুর আরও বলেন, আপনারা জানেন আজকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা একটি ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা সেই কর্মসূচিতে সংহতি জানাই। আমরা মনে করি বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত, যেভাবে মানুষ কষ্ট করছে, এই জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধির ফলে সেটা জনগণের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। এই জ্বালানি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন থেকে পরিবহন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দ্রব্যমূল্যের দাম এবং খরচ বেড়ে যাবে।

সঙ্গে যোগ করেন, বিগত ৬ মাস ধরে দেশে যেভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে এভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়েনি। এর খেসারত কিন্তু জনগণকে দিতে হবে।

জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা এবং প্রতিশ্রুতি না থাকায় তারা একের পর এক দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকার কোন প্রতিষ্ঠানকেই বর্তমানে ঠিক রাখেনি। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেই অযোগ্য এবং দলদাস ব্যক্তিদের বসিয়ে রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ কোনটিই আজ পুরোপুরি কার্যকর নয়। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আজকে সরকারের করায়ত্ত। বর্তমানের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অধিকার আদায় এবং রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি যে বিগত পঞ্চাশ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার ও জনগণের কোন দল প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এ সময় দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকার লুটপাটে ব্যস্ত। দেশে তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষকে সরকার বোকা বানিয়েছে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের মানুষ একটা হতাশার মধ্যে রয়েছে। দেশে যে দলগুলো কাজ করছে তাদের মধ্যে গণতন্ত্রকে ফেরত আনার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। আমাদের স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব হতেও তারা থামাতে পারেনি। আমরা মানুষের মধ্যে বিশেষ করে যুব সমাজের মাঝে আশার আলো পেয়েছি। এটাই আমাদের মূল গন্তব্য। বাংলাদেশে যা ভালো পরিবর্তন আসছে তা যুব সমাজের মাধ্যমেই আসছে। কাজেই নতুন প্রজন্মই পারবে এই দেশটাকে মুক্ত, স্বাধীন, সমৃদ্ধ একটা দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার আমরা নিয়েছি এবং ইনশা আল্লাহ আমরা পারবো।

এ সময় দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ, ফারুক হাসান, খাদেমুল ইসলাম, সোহরাব হাসান, সাদ্দাম হোসেন, শাকিলউজ্জামান, মাহফুজুর রহমান খান, যুগ্ম সদস্যসচিব আতাউল্লাহ, সাইফুল্লাহ হায়দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা ও ঢাকা জেলা উত্তরসহ অন্যান্য ইউনিটের ছাত্র ও যুব পরিষদের নেতাকর্মীরা।