হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩৯৪ জনের তালিকা; বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০১০ সাল থেকে কর্মরত ৩৯৪ জন কর্মকর্তার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এ তালিকা বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ওই তিন বিভাগে গত ২০০৮ থেকে ২০২০ সালে দায়িত্বে থাকাদের নাম, পদবি ও ঠিকানা সরবরাহ করতে ২১ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই সময়ে অর্থপাচার রোধে এ কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা আছে কিনা এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।
এ আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স অ্যান্ড মার্কেটস-১৪৭ জন, ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ইন্সপেকশন ডিপার্টমেন্ট-৫৭ জন, ইন্টারন্যাল অডিট ডিপার্টমেন্ট-১৯০ জন ২০১০ সালে থেকে কর্মরত আছেন। আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে ম্যানুয়েল সিস্টেম থাকায় তাদের তালিকা প্রণয়নে সময় চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া জালিয়াতি ও অর্থ পাচারে ব্যর্থ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এজন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময় প্রয়োজন।
এদিকে বন্ধকি জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম তাহের। জমির মালিক তার কাছে সেই সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় তিনি মামলা করে হয়রানি এবং অন্যান্য আগ্রহী গ্রাহককে হুমকি দিয়ে তাড়ানোরও চেষ্টাও করছেন। এতেও কাজ না হওয়ায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে বন্ধকি জমিটি পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। যদিও আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা কোনোভাবেই এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াতে পারেন না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে সাইদুল ইসলাম তাহেরের এ কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখার খেলাপি গ্রাহক জনতা ট্রেডার্স ও জনতা ব্রিকসের বন্ধকি সম্পত্তি দখলচেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশনায় একটি দল পরিদর্শনে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে কর্মরত উপ-ব্যবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম তাহের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভাব খাটিয়ে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক জনতা ট্রেডার্স ও জনতা ব্রিকসের বন্ধকি সম্পত্তি কিনতে চান। কিন্তু অন্যান্য গ্রাহকের তুলনায় মূল্য কম দেয়ায় মালিকরা তার কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি হননি। এ কারণে মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অন্যান্য আগ্রহী গ্রাহকদের হুমকি দিয়েছেন তাহের। তার কারণেই অন্য গ্রাহকের কাছে জমিটি বিক্রি করতে পারেননি মালিক। তাহেরের কাছে ওই জমি বিক্রি না করার কারণগুলোর মধ্যে কম দাম প্রস্তাব এবং অতিরিক্ত দুই বিঘা জমির দাবি অন্যতম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাইদুল ইসলাম তাহেরের কন্যা সাদিয়া তাসনিম এবং স্ত্রী হাসিনা পারভীনের নামে ভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আইএফআইসি ব্যাংকে মেয়ের হিসাবে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা করেন তাহের। এছাড়া মেয়ে ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় তিন কোটি টাকার স্থিতি পেয়েছে পরিদর্শক দল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে সবশেষে উল্লেখ করা হয়, সাইদুল ইসলাম তাহের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা যৌথভাবে জনতা ব্রিকস এবং জনতা ট্রেডার্সের বন্ধকি জমি মুনাফার আশায় ক্রয়ে আগ্রহী হন।