জাতিসংঘের একটি স্কুলে বৃহস্পতিবার ইসরায়েল বিমান হামলা করেছে, যাতে শত শত বাস্তুচ্যুত লোক আশ্রয় নিয়ে ছিল। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন মধ্য গাজার দিকে অবস্থিত এই স্কুলে হামলায় কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে তারা জাতিসংঘের যে স্কুলে হামলা করেছে সেটি “হামাসের কম্পাউন্ড” হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বিবিসিকে বলেছেন, একটা ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে স্কুলটির উপরের তলার শ্রেণিকক্ষে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
হামাসের মিডিয়া অফিস ইসরায়েলের এ হামলাকে “বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড” বলে অভিযুক্ত করছে।
অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত ও আহতদের সরিয়ে পাশের হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিধ্বস্ত ক্লাসরুম ও মর্গের সামনে পড়ে থাকা লাশের সারি দেখা গেছে।
“অনেক যুদ্ধ হয়েছে! আমরা অসংখ্যবার উচ্ছেদ হয়েছি। আমার সন্তানেরা যখন ঘুমাচ্ছিল তখন তারা তাদের হত্যা করেছে,” হামলায় আহত এক নারী চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলেন একটি ভিডিওতে।
ইসরায়েল যে দাবি করেছে ঐ স্কুলে হামাসের অবস্থান ছিল, সেটিকে নাকচ করে দিয়েছেন হামাস মিডিয়া অফিসের পরিচালক ইসমাইল-আল-থাওয়াবটা।
“দখলদাররা এসব মিথ্যাও বানানো গল্প ব্যবহার করে, তারা অসংখ্য উচ্ছেদ হওয়া লোকের সাথে যে নিষ্ঠুর অপরাধ করেছে সেটিকে সঠিক প্রমাণ করতে চায়,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন তিনি।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমান একটি “সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে নুসেইরাত এলাকায় জাতিসংঘের একটি স্কুলের আড়ালে থাকা হামাস কম্পাউন্ডের উপর।”
বিবৃতিতে বলা হয় তারা সেইসব হামাস ও ইসলামিক জিহাদের “সন্ত্রাসীদের” মেরেছে যারা দক্ষিণ ইসরায়েলে গত ৭ই অক্টোবর হামলায় অংশ নিয়ে ১২০০ লোককে হত্যা করে ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এরপর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৩৬৫৮০ জন মারা গিয়েছে।
আইডিএফ বলছে তারা বিমান হামলার আগে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছিল, “যাতে নিরীহ বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না হয়।”
এর আগে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায় যে তারা বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চল এবং গাজার কেন্দ্রস্থলে দেইর আল-বালাহ শহরের উপরে “অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ” নিয়েছে এবং সেখানে অসংখ্য ফিলিস্তিনি নিহত হবার খবর পাওয়া যায়।
সেখানকার অধিবাসীরা তীব্র বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন এবং দাতব্য সংস্থা মেদেসিন্স সান্স ফ্রন্তিয়েরেস (এমএসএফ) বলেছে যে মঙ্গলবার থেকে অন্তত ৭০টি মৃতদেহ – যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু – একটি স্থানীয় হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, তাদের চিকিৎসা দল গাজার কেন্দ্রস্থলে টিকে থাকা একমাত্র কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্বলিত দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের পরিস্থিতি “কল্পনাতীত” হিসেবে বর্ণনা করেছে।