শরীয়তপুরে বাইপাস সড়ক না করে ব্রীজ নির্মান করায় নিহত ৩ জন

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুর-নড়িয়া আঞ্চলিক সড়কে চলছে দুটি ব্রীজ নির্মানের কাজ। ঐ ব্রীজ দুটিতে নেই কোন বিকল্প রাস্তা (বাইপাস ) সড়ক। আর বাইপাস সড়ক না থাকায় ঘটছে অহরহ দুঘটনা। গত ১ মাসে ঘটেছে প্রায় ১০টি দুর্ঘটনা। এতে একজন ব্রীজের নির্মান শ্রমিকসহ ৩ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছে। এক দিকে মানুষের যাতায়াতে চলছে চরম দুর্ভোগ। অপর দিকে মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুর -নড়িয়া সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারনে প্রায়ই এ ধরনের দর্ঘটনার অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। পরিনত হয়েছে মরন ফাদেঁ।

কোরাইশী এলাকার বাবুল ফকির, শরীয়তপুর সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর নড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের কোরাইশী ও চান্দনী এলাকায় শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ২টি কালভাট ও ১২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানের দরপত্র আহবান করে। সর্বনিম্ম দরদাতা হিসাবে এম এম বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। গত ২ বছর ধরে বিকল্প রাস্তা নির্মান না করে এবং কোন সংকেত বা ব্যারিকেট না দিয়ে পুরাতন সেতুর উপরে নাট বল্টু ছাড়াই একটি বেইলি সেতু বসিয়ে কাজ শুরু করে। অপরটি রাস্তার উপরে নির্মান সামগ্রী রেখে ব্রীজের একটি অংশ ভেঙ্গে ব্রীজের একটি অংশ খোলা রেখে করছে নির্মান কাজ। এর পর জীবনের ঝুকি নিয়ে গাড়ী চালকরা গাড়ি পারাপার ও শ্রমিকরা জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনসাধারন। এখানে গত এক মাসে ঘটেছে প্রায় ১০ টি দুর্ঘটনা।

গত ৯ আগষ্ট পাথর বোঝাই একটি ট্রাক (কুষ্টিয়া-ট -১১-১৬২৬) নড়িয়ার দিকে যাওয়ার সময় পাথর বোঝাই বেইলি ব্রীজটির উপর উঠলে তা ভেংগে উল্টে পড়ে যায়। এ সময় সেখানে কাজ করতে থাকা শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার স্বর্নঘোষ এলাকার মৃত মনির উদ্দিন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী(৩২) ঘটনাস্থালেই মারা যায়। এ সময একই এলাকার মজিবুর সরদার (৬০),তাহের সিকদার (৫৫), ছমেদ খান (৬০) ও দেলোয়ার হাওলাদার (৩৫)পাথর চাপা পড়ে যায় মারান্তক আহত হয়।

শরীয়তপুর- নড়িয়া সড়কের চানন্দী ব্রীজ এলাকায় রাস্তার উপরে ঠিকাদারের লোকজন নির্মান সামগ্রী রাখার কারনে সেখানে মোটর সাইকেল আরোহী শরীয়তপুরের সখিপুর থানার বেপারী কান্দি এলাকার কামাল বেপারীর ছেলে আকিব বেপারী (২০) রডের সঙ্গে লেগেই ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় একই থানার নাইমুদ্দিন বেপারী কান্দির বাসেদ দেওয়ানের ছেলে কাউসার আহাম্মেদ, জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে মিয়াদুল ইসলাম বেপারী আহত হয়। এ ছাড়া বাস ও অটোরিকসা প্রতিদিনই উল্টে ঘটছে দূঘটনা। এতে করে আহত হয় প্রায় ৫০ জনের মতো।
আহত শ্রমিক মজিবর সরদার বলেন, আমরা এ বেইলি ব্রীজটির ও নিচে মাটি কাটার কাজ করছিলাম হঠাৎ করে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক আমাদের উপর পড়লো। ভাগ্যক্রমে আমরা ৪ জন বেচে গেলেও নয়ন বেপারী পাথর চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

স্থানীয় খলিল খান বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এখন বেইল ব্রীজ ভাংগার কারনে আমাদেও প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে শরীয়তপুর নড়িয়া যাতায়াত করতে হবে।
মাহেন্দ্র চালক বশির মিয়া বলেন, এ কাজটি গত তিন বছর ধরে ঠিকাদার করছেন। রাস্তায় মালামাল রাখার কারনে প্রতিদিনি ঘটছে দুর্ঘটনা। ৪ লোক মারা গেছেন। এখানে কোন বিকল্প রাস্তা রাখা হয়নি। গত শুক্রবার যাত্রীবাহী বাস উল্টে ২০ জন আহত হয়।

শরীয়তপুর আন্তঃজেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার বলেন, শরীয়তপুর-নড়িয়া আঞ্জলিক সড়কের দুটি ব্রীজের নির্মান কাজের জন্য মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে কিছু দেওয়া হয়নি এবংবাইপাস সড়ক করা হয়নি। আমরা বার বার সড়ক বিভাগকে বললেও তারা বিষটি গুরত্ব দেয় না। তাই ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। এ পর্যন্ত কয়েক জন মারা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন।
এ ব্যাপরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বির্ল্ডাস এর প্রতিনিধি শরীয়তপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারী বলেন, ব্রীজ দুটিতে আগে বাইপাস নির্মানের জন্য কোন টাকা ধরা হয়নি। এখন ধরা হয়েছে তাই আমরা এখন বাইপাস সড়ক করে দিচ্ছি।

নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এ কে এম ইসমাইল হক বেপারী বলেন, বাইপাস সড়ক নির্মান কওে ব্রীজ দুটির কাজ করার জন্য আমি শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রৌকশলীকে বলেছি তিনি একমত হয়েছেন। জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংএ বিষটি নিয়ে আমি কথা বলেছি তার পরে ও বাইপাস সড়ক না করেই কাজ করা হচ্ছে। এতে করে ৪/৫ জন লোক মারা গেছে বিষটি খুবই মর্মান্তিক।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভুুইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, আমাদের কাজে কোন গাফিলতি নাই। তবে করোনা মহমারীর কারনে কাজে একটু ধীর গতি। আর অতিরিক্ত মাল বাহী ট্রাক উঠার কারনে বেইলি ব্রীজটি ভেংগে গিয়ে একজন নিহত সহ ২ জন নিহত হয়েছে। এতে বেশ ক্ষতি হয়েছে।