যুক্তরাষ্ট্রে সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা, হামলাকারী নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার পর একজন পুরুষ হামলাকারী সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে।

মি. ট্রাম্প বলেছেন, গুলি তার কানে লেগেছে এবং মনে হয়েছে বুলেট তার চামড়া ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে।

সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় হামলাকারীর গুলিতে অন্য এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

পেনসিলভানিয়ায় এক সমাবেশে মি. ট্রাম্পের ওপর ‘দৃশ্যতঃ প্রাণঘাতী হামলার’ এ চেষ্টা হয়েছে।

এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মি. ট্রাম্প মেঝেতে বসে পড়ছেন এবং এরপর তিনি যখন দাঁড়ান তখন তার মুখের এক পাশে রক্ত দেখা যাচ্ছিলো।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে, ঘটনার পর দেয়া এক পোষ্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্প, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় সিক্রেট সার্ভিস ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সাথে নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

মি. বাইডেন বলেছেন, “এ ধরণের সহিংসতার কোন জায়গা আমেরিকায় নেই। এটা জঘন্য, জঘন্য। আমি নিশ্চিত করতে চাই যে আমাদের কাছে সব তথ্য আছে।”

ট্রাম্পের কান ও মুখের এক পাশে রক্ত দেখা গেছে
  • Save

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ট্রাম্পের কান ও মুখের এক পাশে রক্ত দেখা গেছে

এক বিবৃতিতে মি. বাইডেন বলেছেন, “পেনসিলভানিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে গুলির ঘটনা আমি অবহিত হয়েছি।

তিনি নিরাপদ ও ভালো আছেন শুনে আমি কৃতজ্ঞ। আমি তার এবং তার পরিবার ও সমাবেশে যারা ছিলেন তাদের সবার জন্য প্রার্থনা করছি। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় জিল ও আমি সিক্রেট সার্ভিসের কাছে কৃতজ্ঞ”।

সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও এক দর্শক নিহত

ট্রাম্পের সমাবেশে এই ঘটনার জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। একই সাথে সমাবেশে থাকা অন্য এক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড গোলডিনজার বার্তা সংস্থা এপি ও স্থানীয় গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভবনের ছাদে গুলি হাতে ব্যক্তি

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, তিনি সমাবেশে বাইরে ছিলেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট কী বলছিলেন সেটিই কেবল শুনতে পারছিলেন। তখনি ছাদে থাকা এক ব্যক্তি তার নজরে আসে।

“আমরা লক্ষ্য করি যে আমাদের পাশের ভবনের ছাদে অগ্রসর হচ্ছে, ৫০ ফুট দূরে ছিলো আমাদের,” বলছিলেন গ্রেইগ নামের ওই ব্যক্তি।

“তার কাছে একটা রাইফেল ছিলো, আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম যে একটা রাইফেল ছিলো,” বলছিলেন তিনি।

“আমি ভাবছিলাম ট্রাম্প কেন এখনো বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। তাকে কেন স্টেজ থেকে নামানো হচ্ছে না। তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর পাঁচটি গুলির শব্দ”।

তবে বিবিসি প্রত্যক্ষদর্শীর এই বর্ণনা পুরোপুরি যাচাই করে দেখতে পারেনি।

গুলির পরপরই মঞ্চে ওঠে ট্রাম্পকে ঘিরে ধরে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা
  • Save

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

গুলির পরপরই মঞ্চে ওঠে ট্রাম্পকে ঘিরে ধরে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা
সরিয়ে নেয়ার সময় মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • Save

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

সরিয়ে নেয়ার সময় মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প

অবিশ্বাস্য ঘটনা

জেন এবং থেরেসা নামে আরও দুজন প্রত্যক্ষদর্শী বাটলার কাউন্টির ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

তারা জানিয়েছেন যে ছয় থেকে আটটি গুলির শব্দ শুনেছেন তারা।

“আমি ঠাস করে একটা শব্দ শুনলাম, একটু পরে আবার দুটি শব্দ হলো। আমি তখনি বুঝতে পারছিলাম যে এটা গুলি…লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরুর ৩০-৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে,” থেরেসা বলছিলেন।

তারা অবশ্য বলছিলেন যে তারা কাউকে আহত হতে দেখেননি।

তবে তখন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা লোকজনকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে।

এখন পর্যন্ত আরও যা জানা যাচ্ছে

পেনসিলভানিয়ার বাটলারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্য শুরুর পাঁচ মিনিট গুলির শব্দ শোনা যায়।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা মি. ট্রাম্পকে ঘিরে ফেলেন। তার কানে ও মুখের এক পাশে রক্ত দেখা গেছে।

মঞ্চ থেকে নামিয়ে গাড়ীতে ওঠানোর সময় তাকে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলতে দেখা যায়।

সিক্রেট সার্ভিস মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিয়েলমি বলেছেন প্রেসিডেন্ট নিরাপদ এবং ঘটনাটি সিক্রেট সার্ভিস তদন্ত করছে।

ডোনাল্ড ট্রামের প্রচার দল জানিয়েছে যে সাবেক প্রেসিডেন্ট এখন ‘ভালো আছেন’।

পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে শব্দ হওয়ার পরপরই কান চেপে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • Save

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে শব্দ হওয়ার পরপরই কান চেপে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

রিপাবলিকানদের প্রতিক্রিয়া

রিপাবলিকান পার্টির বহু রাজনীতিক এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে টেনেসির সিনেটর মার্শা ব্ল্যাকবার্ন, কানসাস সিনেটর রজার মার্শাল, গাই রেসচেনথেলার এবং টিম বারশেট। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর তারা পোস্ট করেছেন –‘ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা’।

“আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা করছি। আশা করছি সবাই আমার সাথে যোগ দিবে,” এক্স- এ লিখেছেন সাবেক স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি।

“ঈশ্বর প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের মঙ্গল করুন,” লিখেছেন কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি বিগস।

“দয়া করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার পরিবার এবং সমাবেশে যোগ দেয়া সব দেশপ্রেমিকের জন্য প্রার্থনা করুন,” লিখেছেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত হাউজ রিপাবলিকান কনফারেন্সের চেয়ারওম্যান এলিস স্টেফানিক।

New Era IT Village