সাদ্দাম হোসেন নয়ন: বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের উত্থানের কৃতিত্ব পুরোটাই দিলেন বৃহস্পতিবার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া মাশরাফি মুর্তজাকে। তামিম বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তিনি যা করেছেন, কোনও ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোর্ড এবং সমর্থকরা কখনও ভুলবে না। আমাদের সর্বদা তাকে স্মরণ করা উচিত। তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের গাইড করেছিলেন। তাঁর কারণেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্ব আমাদের আলাদাভাবে দেখেছিল।” অধিনায়ক হিসাবে মুর্তজার প্রথম বড় সাফল্য ছিল ২০১৫ সালে যখন তিনি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন।
এরপর একে একে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়। তারপর ২০১৭সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছে। সব মিলিয়ে অধিনায়ক হিসেবে তিনি ৮৮ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ৫০টি জয় পেয়েছেন এবং সামগ্রিকভাবে জয় ৫৬.৮১% রেকর্ড করেছেন। তার অধীনে ২৮ টি-২০ ম্যাচের দশটি জিতেছিল বাংলাদেশ। তার অধিনায়কত্বের সময় ২০০৯ সালে খেলা একমাত্র টেস্টও তারা জিতেছিল, এটি বাংলাদেশের সাদা অংশে তার ফাইনাল ম্যাচও হয়েছিল।
মুশফিকুর রহিম তাকে “পরিবার” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে তার অধীনে খেলাটা এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি আরও বলেছিলেন যে,”মাশরাফি ভাইকে আর কেউ প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।” “তিনি আমাদের পরিবারের অংশ। তিনি আমাদের অংশ, শুধু আমাদের বড় ভাই নয়। আমরা তাকে অধিনায়ক হিসাবে মিস করব। “তার অধিনায়কত্বে আমাদের দলটি মাঠের বাইরে এবং ভিতরে অনেক সাজানো এবং একত্রিত ছিল। তাঁর অধীনে খেলা এবং তাঁর সাথে খেলা পুরোপুরিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমি তাকে আরও খেলতে দেখতে চাই এবং আমি আশা করি তিনি দেশের সেবা চালিয়ে যাবেন।”
মুর্তজাকে প্রশংসা করলেন প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। বাশার বলেন, “মাশরাফি অন্য নিয়মিত খেলোয়াড়ের মতো নন। “তিনি আলাদা, তাঁর একটি বিশেষ গুন ছিল দলনেতা হবার, যেটি তার খেলায় প্রতিফলিতও হয়েছে। তিনি অধিনায়ক হিসাবে পদত্যাগ করছেন এটিও একটি বিশাল সংবাদ তবে তিনি ফিট থাকলে তার কাছে এখনও অফার করার মতো অনেক কিছু রয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
বাংলাদেশের জয়ের পরে তামিম ইকবাল আরও যোগ করেন যে “আমাদের বিজয়ী হওয়ার হারটি [মাশরাফির অধীনে] দেখুন; এটি অনেক বেশি। তার সাথে ম্যাচ খেলা আরও সহজ হয়ে যায়। তিনি এখনও অবসর গ্রহণ করছেন না এবং আশা করি তিনি নির্বাচকদের বিবেচনায় থাকবেন । আমি অবশ্যই তার অধিনায়কত্ব মিস করব। আমার মতে মাশরাফি বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা অধিনায়ক।
আশরাফুল বলেন, “আমাকে অবশ্যই মাশরাফিকে সালাম জানাতে হবে তিনি এত দিন ধরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলে্ন। ২০১৪ সালে মাশরাফি অধিনায়ক হওয়ার সময় বাংলাদেশ তেমন একটা জিততে পারেনি। তবে পরের বছরটি ক্রিকেটে আমাদের সেরা সময় ছিল। আমরা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছি, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছি এবং যদিও আমরা বিশ্বকাপে অষ্টম স্থান অর্জন করেছি কিন্তু আমরা ভাল খেলেছি’’।
মাশরাফি মুর্তজা ২০০৯ সালে প্রথম অধিনায়ক হওয়ার সময় তার পক্ষে দল পরিচালনা সহজ ছিল না। তিনি একাধিকবার আহত হয়েছিলেন তাই বেশিদিন অধিনায়ক থাকতে পারেননি। ২০১৪ থেকে তিনি ইনজুরিমুক্ত খেলেন, এবং নেন অগোছালো দলটির দায়িত্ব। তার অধীনে দলটি এগিয়ে গেছে এক অন্য উচ্চতায় । সেই দিনগুলিতে তিনি যেমন নিজেকে বদলিয়ে ফেলেছিলেন, তেমনি তার সুনিপুণ কারিগরি হাতেই বদলে গেছে সেই আগের বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আর ভয় করে না, হারার আগে আর হারেনা, চোখে চোখ রেখে লড়াই করে তার প্রমান হলো কিছুদিন আগে ছেলেদের অনূর্ধ্ব -১৯ ওয়ার্ল্ড-কাপ জয়।