রূপগঞ্জের নাওড়া মোশা বাহিনীর তাণ্ডবে আবারও রণক্ষেত্র

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হত্যাসহ ৩২ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশা এবং তার বাহিনী আবারও নিরীহ প্রতিবাদী গ্রামবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।

  • Save

এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মোশাকে গ্রেফতার করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে, গুলিবর্ষণ করে তাকে ছিনিয়ে নেয় তার বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় মোশা বাহিনীর হামলায় পুলিশ, পথচারী, এলাকার নিরীহ মানুষসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

এ ঘটনায় পুলিশ তিন নারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় এ তাণ্ডব চালায় মোশা বাহিনী।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নাওড়া এলাকার সফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে চিনখলা এলাকায় নিজেদের জমি দেখতে যান। এ সময় হঠাৎ করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘মোশা বাহিনী’র প্রধান মোশারফ হোসেন মোশা, তার ছেলে নিরব ও স্বাধীনসহ তাদের সহযোগী আব্বাস, নাজমুল, আনার হোসেন, সাখাওয়াত উল্লাহ, জয়নাল, লিটন, তাজাল, রায়হান, রিফাত, রাজু, রোবেলসহ বাহিনীর অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন সন্ত্রাসী পিস্তল, রামদা, চাপাতি, জুইতা, শটগানসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় মোশা ও তার ছেলেরাসহ কয়েকজন মিলে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পরে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে মোশা বাহিনীর সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।

  • Save

খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি ও র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে অভিযানে নামেন। অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে মোশা বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে এবং গুলি করে মোশাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় রূপগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (ওসি/তদন্ত) আতাউর রহমান, এএসআই সহিদুল হকসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পিছু হঠে। এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন আনু নামের এক হামলাকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) আবির হোসেন ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও বেশিসংখ্যক সদস্য নিয়ে আবারও অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মোশা বাহিনীর আলো আক্তারসহ ৩ নারী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

নাওড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুল আলিম মিয়া বলেন, মোশা বাহিনী আবারও নাওড়া এলাকার নিরীহ মানুষের ঘুম হারাম করে ফেলেছে। আমরা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছি। মোশা আরও বেশি করে অত্যাচার করবে। মোশাকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

একই এলাকার নিরীহ মেকাইল বলেন, কতদিন শান্তিতে ছিলাম, এখন আবার মোশা জ্বালাযন্ত্রণা শুরু করে দিয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা দিন।

  • Save
  • Save

নাজমা বেগম নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে মোশা বাহিনী। আমরা এ বাহিনীর আতঙ্কে এখন ঘর থেকে বের হতে পারছি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাওড়া এলাকার কয়েকজন নিরীহ নারী-পুরুষ বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা জেলহাজতে থাকাকালীন নাওড়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষ শান্তিতে ছিল। এখন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করা হলে এলাকার নিরীহ মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসবে।

এ ব্যাপারে মোশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।