হোম বাংলাদেশ জাতীয় পৃথিবীর যেসব প্রাণী বিলুপ্তির পথে

পৃথিবীর যেসব প্রাণী বিলুপ্তির পথে

পৃথিবী থেকে হয়তো শীঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রাণীজগতের বেশকিছু প্রজাতি। ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার টিম ফ্ল্যাচ খুঁজে বেড়িয়েছেন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের। এসব প্রাণীর ছবি তুলেছেন তিনি। সবাইকে দেখাতে চেয়েছেন পৃথিবী কি হারাতে চলেছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর ছবি নিতে টিম দুই বছরেরও বেশি সময় পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এদের অনেকের বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ মানুষই।

পৃথিবীর যেসব প্রাণী বিলুপ্তির পথে :

সাইগা অ্যান্টিলোপ

মানুষ বনাঞ্চল ধ্বংস করে লোকালয় নির্মাণ করছে। চোরা শিকারি ও প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের কারণে ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি। একই সঙ্গে রয়েছে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। সাইগা অ্যান্টিলোপ
সাইগা অ্যান্টিলোপ

পোলার বিয়ার বা মেরু ভালুক

কাজাখাস্তানের বিস্তীর্ণ স্টেপ অঞ্চলে এ বিচিত্র প্রাণীটার বসবাস। আগে ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তরাঞ্চলে এরা বিশাল সংখ্যায় বিচরণ করতো। বর্তমানে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। কাজাখাস্তানের সংরক্ষিত অঞ্চলে আর মার ৩৩টি সাইগা অ্যান্টিলোপ আছে বলে জানা যায়। পোলার বিয়ার বা মেরু ভালুক
পোলার বিয়ার বা মেরু ভালুক

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের এক রিপোর্টে বলা হয়। খুব বেশি হলে আর মাত্র ৪০ বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে পোলার বিয়ার। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ। সম্প্রতি কানাডার কিছু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে অনেক পোলার বিয়ারের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

ফিলিপাইন ঈগল

ফিলিপাইনের জঙ্গলে বাস করে এ অদ্ভুত সুন্দর পাখি। এদের ফিলিপাইন ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এদের আকৃতিও বিশাল, লম্বায় সাড়ে তিনফুট, ওজন আট কেজি। এরা বানরখেকো ঈগল নামেও পরিচিত। এরা গাছ থেকে বানর শিকার করে খেতে বেশ পটু। বর্তমানে এ ঈগল পৃথিবীর মহাবিপন্নের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

আইবেরিয়ান লিনক্স

বিড়াল প্রজাতির এ প্রাণীর বসবাস দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয়ান পেনিনসুলা অঞ্চলে। ২০০০ সালের শুরুতে জরিপ চালিয়ে দেখা যায় পৃথিবীতে মাত্র ১০০টি আইবেরিয়ান লিনক্স রয়েছে। ২০০২ সালে প্রাণীটি সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২ সালে এদের সংখ্যা বেড়ে ৩২৬টিতে পৌঁছেছে।

লিমুর

লিমুর বনমানুষ গোত্রের প্রাণী। একমাত্র আফ্রিকান দ্বীপ মাদাগাস্কারে এদের দেখা যায়। ধারণা করা হয়, লিমুর আফ্রিকা থেকে ভেসে ভেসে মাদাগাস্কার দ্বীপে উপস্থিত হয়। এরপর মাদাগাস্কার অনুকূল পরিবেশে বংশবিস্তার করে।

ক্যারিবিয়ান সন্ন্যাসী সীল 

 

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেই বাস করতো এই প্রজাতির সীল। মেক্সিকো উপসাগর, সেন্ট্রাল অ্যামেরিকার পূর্ব উপকূল এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার উত্তর উপকূলে পাওয়া যেতো এই প্রাণী। কিন্তু তাদের শরীরের চর্বি গলিয়ে তেল বানানোর জন্য ক্রমে তারা শিকারিদের হাতে মারা পড়তে শুরু করলো। আর সেই সঙ্গে তাদের খাবারের উৎস যে সামুদ্রিক মাছ তার  সংখ্যাও কমে যেতে থাকলো।

প্যাঙ্গোলিন

গ্রীষ্মপ্রধান বনাঞ্চলের স্তন্যপায়ী প্রাণী প্যাঙ্গোলিন। ভারত, বাংলাদেশ, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। প্যাঙ্গোলিনের আঁশ প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ কারণে প্রাণীটি বর্তমানে বিপন্ন প্রায়। চীনা গবেষকদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী প্যাঙ্গোলিন।

রেড পান্ডা

নাম লাল পান্ডা হলেও পান্ডার সঙ্গে এর খুব কমই মিল। এদের দেখতে পাওয়া যায় মূলত হিমালয় অঞ্চলে এবং দক্ষিণ চীনে। এদের সংখ্যা কমে আসার প্রধান কারণ- বাসস্থান ধ্বংস, চোরাশিকারির উৎপাত ও প্রজননে অনাগ্রহ। বর্তমানে এদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম বলে ধরা হয়।

ইয়াংজি রিভার ডলফিন

২০০৬ সালে এই ডলফিনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ইয়াংজি নদীর এই ডলফিন দেখতে ফ্যাকাসে ও ছাইরঙা, অন্য ডলফিনদের তুলনায় দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নয়। জলজ প্রাণীর অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা দিতে পারত এই ডলফিন। চীনের নদীতে মৎসজীবী এবং অন্য ব্যবসায়ীদের নৌকার শব্দ, দূষণ আর খাবারের অভাব বেড়ে যাওয়ায় এদের শান্ত নিরিবিলি জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে।

পাইড ট্যামারিন

বিচিত্র এ প্রাণীটা দেখলে মনে হবে যেন কোনো কল্পকাহিনী থেকে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের অ্যামাজন রেইনফরেস্টের দূরবর্তী অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। গাছের ফল ও পোকামাকড় খায় এরা। বন উজাড় করে মানুষের বসতি স্থাপনের কারণে এরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।