হোম আন্তর্জাতিক ফোরাত নদীর বর্তমান অবস্থা ২০২৪

ফোরাত নদীর বর্তমান অবস্থা ২০২৪

ফোরাত নদী ২,৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় ৪,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০ শতাংশ তুরস্কতে অবস্থিত হলেও এর ৯০ শতাংশ পানির উৎস হলো তুরস্কের উচ্চভূমি। তুরস্কের কোরাসুয়ু নদী, মুরাত নদী এবং আরো অনেকগুলো নদী পূর্ব মধ্য তুরস্কে এলাজিগ এর কাছে মিলিত হয়ে ফোরাতের উর্ধ্ব অংশ গঠন করেছে। তারপর নদীটি আলাব শহরের ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। পূর্ব সিরিয়াতে এর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক থেকে আগত খাবুর নদী নামের একটি প্রধান উপনদী মিলিত হয়েছে।

ফোরাত নদী প্রতি বছর প্রায় ২৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি বহন করে। এপ্রিল ও মে মাসে নদীটি সর্বোচ্চ পানি ধারন করে। ফোরাত নদীটি অনেক গভীর নয় বলেই এতে ছোট ছোট নৌকা ছাড়া আর কিছু চলাচল করতে পারে না। এটি মূলত তার পাশ্ববর্তী শহরগুলোতে পানি সরবরাহের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তাই দেখা যায় নদীটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম একটি মাধ্যম। এই তিনটি দেশই জমিতে সেচ দেয়া ও পানির অন্যান্য কাজের জন্য ফোরাতের ওপরই নির্ভরশীল। তাই দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে নদীতে বিভিন্ন বাঁধ নির্মান করে লাভবান হতে চায়। সিরিয়া, তুরস্ক ও ইরাক সরকার এখন পর্যন্ত ১২টি বাঁধ নির্মান করায় ১৯৯৯ সালের পরে ফোরাত নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করে।

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু ও মানুষের সৃষ্টি করা দূষণের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে ফোরাত নদী, যেটা কিয়ামতের আলামত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নদীর পানির স্তর উদ্বেগজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। হঠাৎ নদীর আগের এবং বর্তমানের ছবি পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যাবে কত দ্রুত এই নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো তো ২০২৩ সালে এক একটি প্রতিবেদন থেকে পাওয়া খবর।

২০২৪ সালে ফোরাত নদী নিয়ে আরো একটি খবর প্রকাশ গিয়েছে যে এখানে নাকি স্বর্ণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। যা সংগ্রহ করতে আশেপাশের অনেকেই ভীড় করছে নদীর পাশে।

যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর করা ভবিষ্যৎ বাণীর থেকে জানা যায়, ’ফোরাত নদীর স্থলে স্বর্ণের পাহাড় ওঠবে’। এর দু’টি অর্থ হতে পারে:

এক. নদীটির জায়গায় একটি পাহাড় ওঠবে, যার ভেতর স্বর্ণের খনি থাকবে।

দুই. নদীতে স্বর্ণের খনি থাকবে। তবে পাহাড়ের সঙ্গে তুলনার উদ্দেশ্য হলো স্বর্ণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।

তিনি ইবনে মাজাহ এর সূত্রে আরো একটি বর্ণনা এনেছেন। হাদিসটি হচ্ছে, হযরত ছাওবান (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের খনিকে কেন্দ্র করে তিনটি গ্রুপ যুদ্ধে লিপ্ত হবে। প্রত্যেকজন খলিফার সন্তান হবে। ওই খনি কারো জন্য হবে না। এমতাবস্থায় পূর্ব দিকে কালো পতাকা ওড়ানো হবে। তারা এসে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে হত্যা করতে পারবে না। এতটুকু হাদিস বলার পর বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (সা.) আরো কিছু বিষয় বলেছিলেন। কিন্তু তা আমি মুখস্থ রাখতে পারিনি। তবে বাকি যতটুকু মনে আছে তা হলো ‘যখন তোমরা তাকে দেখবে তার হাতে বাইয়াত হবে। কারণ, তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদি (আ)।’ এরপর তকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রাহ.) এর সূত্রে বলেন, ‘ইবনে মাজায় বর্ণিত খনি দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় আগের হাদিসে বর্ণিত খনি তাহলে বুঝা যায় যুদ্ধের এই ঘটনা ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময়ে হবে। ওই সময়টা হচ্ছে ইসা (আ.) এর নাজিলের আগ মুহূর্ত। এর আগে অবশ্যই একটি আগুন বের হবে।

হাদিসের কিতাবগুলোতে আমরা কেয়ামতের যত আলামতের বর্ণনা পাই, কোনো ঘটনার ক্ষেত্রেই সুনিশ্চিতভাবে বলার সময় এখনও আসেনি যে এটাই কিয়ামতের আলামত। ইমাম মাহদির কথাই ধরা যাক। ইমাম মাহদি দুনিয়াতে একজনই আসবেন। এটাই সত্য। কিন্তু রাসূল (সা.) এর যুগের পর থেকেই ইমাম মাহদির আগমণের ধারা শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সে ধারা অব্যাহত আছে। আই এস আই এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর বাগদাদির বেলায়ও শুনা গেছে তিনি ইমাম মাহদি। অথচ প্রকৃত মাহদির আগমন আরো বহু দূর। মূলত ইমাম মাহদি ও কিয়ামতের আলামতের ছুতায় মানুষ নিজের দায়িত্ব এড়াতে চায়। সুযোগ তৈরি হয়, সমাজে ছড়িয়ে পড়া অনৈতিকতা ও বিশৃঙখলাকে কিয়ামতের আলামত ধরে তা হওয়াকে বাঞ্জনীয় মনে করা।

প্রকৃত মুমিনের কাজ কখনো কেয়ামতের আলামত খুঁজে বের করে মানুষের মাঝে হতাশা তৈরি করা নয়। এটাও কোনো মুমিনের কর্মপন্থা হতে পারে না যে, সে ইমাম মাহদির অপেক্ষায় বসে বসে প্রস্তুতি নেবে। রাসূল (সা.) এর শিক্ষা হলো, অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া। যে যতটুকু করবে সে তাই আখেরাতে পাবে।