নতুন জটিলতায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে দ্রুত। ডিসেম্বরে একটি অংশ চালুর আশাও করছে সরকার। তবে কিছু জটিলতা রয়েই গেছে। নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে প্রয়োজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত অনুমতি। জমি অধিগ্রহণ নিয়েও আছে জটিলতা। এসবের সমাধানে তাই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সহায়তা চান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এক্সপ্রেসওয়েটি রাজধানীর বিদ্যমান সড়কের ওপর দিয়েই নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাকিটা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশে এ ধরনের প্রকল্পের মধ্যে প্রথম।

বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এটি।

ঢাকার যানজট নিরসনে এটিই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সংযোগ সড়কসহ যার দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

ডিসেম্বরে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত এই উড়ালসড়কের একটি অংশ খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।

খিলগাঁও অংশে চলছে পিলারের ওপর টি-গার্ড বসানোর কাজ। বড় একটি অংশের কাজ এখনও বাকি।

মহাখালী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত পিলারের ওপর এখনও টি-গার্ড বসানোর কাজ শেষ হয়নি। শেষ হলেই বসবে স্ল্যাব।

তারপর রেলিং ও সবশেষে শুরু হবে সড়ক নির্মাণের কাজ।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, কয়েক মাসেই এই কাজ শেষ করা সম্ভব।

জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ইতালি-থাই ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড ১ দশমিক ০৬২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকসন করপোশনের সঙ্গে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপের এয়ারপোর্ট-বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার ও তৃতীয় ধাপের মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে।

২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এর পরীক্ষামূলক পাইলিং উদ্বোধন করা হয়।

সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা ও আশুলিয়া-সাভার এলাকার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে উড়ালসড়ক। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে তৈরি করবে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগের সুযোগ।

আবার বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত হবে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-তেঁতুলিয়া, ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে এ প্রকল্প।

উড়ালসড়কটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে।

এখন বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পয়েন্ট পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। বিমানবন্দর-বনানী-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে এক্সপ্রেসওয়েটি।

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি এটির সঙ্গেই যুক্ত হবে। এর ফলে ইপিজেড থেকে বাইপাইল, আশুলিয়া, আব্দুল্লাহপুর, এয়ারপোর্ট, বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে যানজটমুক্তভাবে চলাচল সম্ভব হবে।

এক্সপ্রেসওয়ে দুটি চালু হলে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বাসিন্দারা ঢাকার ভেতরের যানজট এড়িয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারবেন।

সূত্র জানিয়েছে, নকশা অনুযায়ী এর একটি পথ হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে যেতে দরকার হবে রাজউকের অনুমতি।

কমলাপুর এলাকায় টোলপ্লাজা ও পথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হবে রেলওয়ের অনুমতি। একইসঙ্গে মেট্রোরেল-৫ এর সঙ্গেও সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে সংযোগকারী ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই উড়াল সড়ক প্রকল্পটি ২০১১ সালে হাতে নেয় সরকার।

জানা গেছে, তিন ধাপে এর কাজ সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বনানী রেল স্টেশন পর্যন্ত হবে ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। তৃতীয় ধাপে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার।

আরো পড়ুন: দুই বছর পর ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু