অনলাইন ডেস্ক: ইরানের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন সস্তায় গ্যাস সরবরাহ করছে রাশিয়া। ফলে ইরানের পুরোনো ক্রেতারা এখন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে, বিশেষ করে আফগানিস্তান, তুরস্ক ও পাকিস্তান।
রপ্তানিকৃত এলপিজি খাবার রান্না ও গরম করা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানো পর্যন্ত সব কিছুতে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের জন্য এলপিজি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আয়ের উৎস। মস্কোর এলপিজিসহ অন্যান্য গ্যাসের জন্য গ্রাহক সন্ধান ইরানের জন্য সাপেবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে দু’দেশের সম্পর্কে ভাটা পড়তে পারে।
ইরানের এনতেখাব পত্রিকাকে দেওয়া বক্তব্যে দেশটির তেল রপ্তানি ইউনিয়নের প্রধান সৈয়দ হামিদ হোসেইনি বলেন, আমরা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাছে তরল গ্যাস বিক্রি করছিলাম প্রতি টন ছয়শ থেকে সাতশ ডলারে। কিন্তু আফগানিস্তান সম্প্রতি বলেছে যে, তারা আমাদের কাছ থেকে প্রতি টন ৪৫০ ডলারে কিনতে চায়।
সস্তায় রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ অন্যান্য আঞ্চলিক সরবরাহকারী যেমন কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানকেও তাদের দাম কমিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে। ফলে অস্থিরতা পেট্রোলিয়াম ও ডিজেল জ্বালানির বাজারেও প্রসারিত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুসারে, ইরান বছরে ৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করে, যা দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। উৎপাদনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ঘরবাড়ি, কারখানা এবং পাওয়ার ইউটিলিটির মতো কাজে ব্যবহার করা হয় এবং বাকিটা রপ্তানি হয়।
ইরানের সঙ্গে ইরাক, তুরস্ক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাছে গ্যাস বিক্রির চুক্তি রয়েছে। এছাড়া আজারবাইজানের সঙ্গেও একটি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে শুধু ইরাকই গ্রাহক থাকবে ইরানের।
তেহরানের ন্যাশনাল গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজিদ চেগিনির মতে, ইরাক ইরানকে একটি চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছে এবং এখনও তারা প্রতিবেশীর কাছ থেকে গ্যাস কিনতে আগ্রহী। ইতোমধ্যেই তুরস্কের সঙ্গে একটি নতুন বার্ষিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় ইরানের সাংবাদিক সাইয়েদ সাদেগ হোসেইনি শিল্প সংশ্লিষ্ট একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, আঙ্কারাকে গ্যাস সরবরাহ করতে আগামী তিন বছরের জন্য তুর্কি গ্যাস ভাণ্ডার ভাড়া নিয়েছে রাশিয়া। এ ধরনের পদক্ষেপ ইরানের ব্যবসার ক্ষতি করবে।
নিক্কেই এশিয়ার পক্ষ থেকে তুরস্ক ও আফগানিস্তানের মতো গ্রাহক হারাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে চেগিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশই তার জ্বালানি সরবরাহ নিরাপদ করতে স্বাধীন, যেখান থেকে এটি আরও ভালো ও সাশ্রয়ী হয় সেখান থেকেই কিনবে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোন দেশ থেকে তারা জ্বালানি আমদানি করতে চায়। এসব দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে ছেদ পড়বে না এবং ইরান তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানান তিনি।
মস্কোর উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, একই সঙ্গে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ব্যবস্থায় তেহরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার করতে ভিয়েনার আলোচনা ত্বরান্বিত হতে পারে, এমনটা ভাবা হয়েছিল। সেই আলোচনাও স্থগিত হয়ে গেছে। রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহে ভাটা পড়ার সম্ভাব্য সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে, ইরানকে এখন রাশিয়ার মূল্য ছাড়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গ্যাসের দাম কমানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
গ্যাস নিয়ে এই দ্বন্দ্ব ইরান-রাশিয়া সম্পর্ককে জটিল করে তুলছে। অথচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চীনের সঙ্গে রাশিয়াও তেহরানের পক্ষে ছিল, যা জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামেও পরিচিত।
জো বাইডেন যখন ট্রাম্পের স্থলাভিষিক্ত হন, তখন পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা নতুন গতি পায়। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ সেই আলোচনায় নতুন জটিলতা যোগ করে।
প্রাথমিকভাবে, রাশিয়াসহ জেসিপিওএর সব পক্ষই এই অবস্থান নিয়েছিল যে ভিয়েনা আলোচনা ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তা এনরিক মোরা ভিয়েনা আলোচনায় নতুন ভাবে সফল করার প্রয়াসে সম্প্রতি তেহরান সফর করেছেন। কিন্তু দুই দিনের আলোচনায়, সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে।
এদিকে, ইরানের পরমাণু আলোচনায় রাশিয়ার দূত মিখাইল উলিয়ানভ একটি টুইট বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো ধরনের চুক্তির বিষয়ে তার অসম্মতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তববাদী হওয়ার কারণে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে প্রবেশ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জেসিপিওএতে আমরা ফলপ্রসূ আলোচনা আশা করতে পারি না।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
আরো পড়ুন : খাদ্য সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ প্রস্তুত: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী