লাইফস্টাইল ডেস্ক:ক্যানসার শব্দটি শুনলেই ঘাবড়ে যান সবাই। এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসাযোগ্য। তবে শরীরে ক্যানসার কোষ বেড়ে গেলে তা জীবননাশের কারণ হতে পারে। অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে, ক্যানসার হওয়ার আগে বোধ হয় শরীর অসুস্থ হয় কিংবা তীব্র সমস্যা দেখা দেয়।
আসলে সবার ক্ষেত্রেই যে ক্যানসারের কারণে শরীরে বিভিন্ন জটিল লক্ষণ প্রকাশ পায়, তা কিন্তু নয়। অনেকের ক্ষেত্রে ক্যানসার নীরবেই শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো জটিল লক্ষণ প্রকাশ পায় না।এ কারণেই চিকিৎসকরা ৬ মাস বা এক বছর পরপর সবাইকে মেডিকেল চেকআপের পরামর্শ দেন। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা যায়।
ক্যানসার সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা থাকলেও অনেকেরই হয়তো জানা নেই, শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথাও কখনো কখনো হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ। তাই যে কোনো ব্যথাকে উপেক্ষা করবেন না।
ক্যানসারের ব্যথার কারণ কী?
ক্যানসারের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যখন একটি টিউমার শরীরের হাড়, স্নায়ু বা অন্যান্য অঙ্গে চাপ দেয় তখন ক্যানসারের ব্যথায় কষ্ট পান রোগী। আবার ক্যানসারে জন্য উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও ব্যথা শুরু হতে পারে।কিছু কেমোথেরাপির ওষুধের ফলে হাত ও পায়ে অসাড়তা ও ঝাঁকুনি হতে পারে। একইভাবে, রেডিওথেরাপি ত্বকের কিছু ক্ষতি করে। ফলে ত্বকে জ্বালা ও লালভাব দেখা দেয়।
ক্যানসারের ব্যথার প্রকারভেদ
সোমাটিক- ক্যানসারের রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যথা হওয়াটা সাধারণ। এই ব্যথা অনেকটা কম্পন বা চাপ দিয়ে একনাগারে হয়ে থাকে।
নিউরোপ্যাথিক- কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারির মতো চিকিৎসার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হলে এ ধরনের ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে অনেকটা জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণার মতো ব্যথা অনুভব করেন রোগী।
ভিসারাল- এ ধরনের ব্যথা মূলত শরীরের গহ্বরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে যেমন- বুক, পেট বা পেলভিসে হয়। এই ধরনের জায়গার যে কোনো ব্যথাকে ভিসারাল পেইন বলে। ক্যানসারের ক্ষেত্রে যখন টিউমার এসব অঙ্গে চাপ দেয়, তখন এটি একনাগারে ব্যথা হতে পারে।
তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা- কোথাও আঘাতের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন সবাই। তবে এমন ব্যথা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী হয়। তবে ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কয়েক মাস ধরেও চলতে পারে ব্যথা।
ক্যানসারের ব্যথার লক্ষণ
মায়ো ক্লিনিকের মতে, ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত ব্যথা ‘নিস্তেজ, তীক্ষ্ণ বা জ্বলন্ত’ হতে পারে। এটি ‘মাঝে মধ্যে, বিরতিহীন, হালকা, মাঝারি বা গুরুতর’ পর্যায়ে হতে পারে।
ক্যানসারের ব্যথা তথনই ঘটে যখন টিউমার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি স্নায়ু, হাড় বা অঙ্গগুলোতে চাপ দিতে পারে। টিউমারটি এমন রাসায়নিকও মুক্ত করতে পারে যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
আপনার যদি প্রায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র, একনাগাড়ে কিংবা প্রায়ই কোনো স্থানে ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসক লক্ষণ দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারবেন আদৌ আপনি ক্যানসারে আক্রান্ত কি না।
ক্যানসারের লক্ষণ কী কী?
>> চরম ক্লান্তি
>> রক্তপাত
>> ওজন কমে যাওয়া
>> হঠাৎ কোথাও পিণ্ড দেখা দিলে কিংবা
>> ত্বকের পরিবর্তন
ক্যানসার সম্পর্কে যা জানা জরুরি
ক্যানসারের ব্যথা বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে। ক্যানসারের অবস্থান, ক্যানসারের ধরন, রোগটি যে পর্যায় পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে ও রোগীর ব্যথা সহনশীলতার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ক্যানসারের ব্যথা ব্যক্তিভেদে পৃথক হতে পারে।
তাই প্রায়ই শরীরের কোনো স্থানের ব্যথাকে উপেক্ষা করবেন না। ব্যথা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে কিংবা পেইনকিলার খেয়ে খেয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না। মনে রাখবেন, ক্যানসার একটি নিরাময়যোগ্য রোগ, যদি তা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়।
আরো পড়ুন: শিশুকে বই পড়ার অভ্যাস করাবেন যেভাবে