লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
প্রাকৃতিক নিয়মেই বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষয় হয়। তবে মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার খেলে এই ক্ষয় প্রক্রিয়া ধীর করা যায়।
বয়সে ভারে মস্তিষ্কের ক্ষয় হবেই, তাতে পরিবর্তন আসবে বিষয়টা অস্বাভাবিক নয়। তবে এমন কিছু করার আছে যা মস্তিষ্কের এই বয়সভিত্তিক পরিবর্তন রুখতে পারে।
পাশাপাশি মস্তিষ্কের ক্ষয়জনীত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও কমবে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘লেনক্স হিল’ হাসপাতালের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ জনাথন পার্টেল বলেন, “নিয়মিত শরীরচর্চা, নতুন কিছু চেষ্টা করা, নতুন কোনো কৌশল অনুশীলন করা, ঘুমকে প্রাধা্ন্য দেওয়া ইত্যাদি মস্তিষ্কের রোগ দূরে রাখবে এবং বৃদ্ধ বয়সেও মস্তিষ্ক থাকবে প্রখর।”
রিয়েল সিম্পল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “মস্তিষ্ক বিরতিহীনভাবে কাজ করে যায়। জ্ঞানীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাস, নড়াচড়া, শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিসহ শারীরিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করে। খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর হলে এই কার্যক্রমগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা থাকবে অটুট।”
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাবার বলতে যা বোঝায়
শিকাগো’র ‘কেস ইন্টিগ্রেটিভ হেল্থ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘মেডিকাল ডিরেক্টর’ কেইসি কেলি বলেন, “পরিপূর্ণ খাবার যেমন- ফল, সবজি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি এবং কে- এই উপাদানগুলো খাদ্যাভ্যাসে থাকতে হবে। যাই খান না কেনো, তাজা খাবার খেতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আবার কিছু খাবার বাদ দেওয়াও মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেগুলোতে ‘স্যাচুরেটেইড ফ্যাট’, ‘ট্রানস ফ্যাট’, বাড়তি লবণ ও চিনি থাকে প্রচুর পরিমাণে সেগুলো বাদ দিলে মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।”
তবে মস্তিষ্কের জন্য উপকারী কিছু খাবার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পত্রল সবুজ সবজি
কেলি বলেন, “কপি, পালংশাক, ব্রকলি ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সবজিগুলো সেসব পুষ্টিগুণে ভরপুর যা মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজন। যেমন- এগুলোতে থাকে ভিটামিন এ, যা ‘নিউরন’য়ের নতুন কিছু শেখা ও স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে বাড়ায় ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ ও প্রদাহনাশক উপাদানের কার্যকারিতা। ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ আর প্রদাহ মস্তিষ্কের বড় দুই হুমকি।”
পার্টেল বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ আর প্রদাহ ডেকে আনতে পারে বিভিন্ন ‘নিউরোলজিকাল’ রোগ। যেমন- হতাশা, মানসিক অস্বস্তি, ‘আলৎঝাইমার’স রোগ’, ‘পারকিনসন’স ডিজিজ’ ইত্যাদি।”
কেলি আরও বলেন, “মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন দুই ধরনের গাঢ় সবুজ রংয়ের পত্রল সবজি খেতে হবে। সেটা যে সালাদই হতে হবে এমন নয়। ডিম ভাজিতেও পালংশাক যোগ করে খাওয়া যায়। সুপ খাওয়া অভ্যাস এক্ষেত্রে বেশ উপকারী হবে।”
জামজাতীয় ফল
‘ফ্লাভানয়েড’ প্রচুর পরিমাণে থাকে ‘বেরিজ’ বা জামজাতীয় ফলে। যে কারণে এদের রং হয় গাঢ়।
ডা. কেলি বলেন, “এই উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।”
তিনি ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন এইজিং নিউরোসাইন্স’ শীর্ষক জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, “ফ্লাভানয়েড স্নায়ু কোষের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়ক। আবার এই উপাদান ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’। ফলে স্নায়ুকে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ থেকেও বাঁচায়।
“প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার আধাকাপ যে কোনো এক ধরনের ‘বেরিজ’ বা জাম-জাতীয় ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। ব্লুবেরি আর স্ট্রবেরি বিশেষ উপকারী। কাঁচা খেতে পারেন আবার অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।”
বাদাম
পার্টেল বলেন, “বাদামে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের অবকাঠামোকে ধরে রাখে। নিরবিচ্ছিন্ন রক্তপ্রবাহ ধরে রাখার জন্যও এই উপাদান জরুরি। এতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাবে এবং তার কার্যক্রম অটুট থাকবে। ভিটামিন ই, দস্তা আর সেলেনিয়াম পাওয়া যায় বাদাম থেকে। যার প্রতিটিতে আছে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ গুণাগুণ।”
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ বলে, সপ্তাহে কমপক্ষে চারবার দেড় আউন্স পরিমাণ বাদাম খাওয়া উচিত, লবণ ছাড়া। এটা প্রায় একমুঠ বাদাম কিংবা দুই টেবিল-চামচ বাদামের মাখনের সমতুল্য। সব ধরনের বাদাম থেকেই উপকার মিলবে।”
চর্বিযুক্ত মাছ
ডা. কেলি বলেন, “ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’য়ের আদর্শ উৎস চর্বিযুক্ত মাছ। এই উপাদান রক্তে ‘বেটা-অ্যামিলয়েড’ যা এক ধরনের প্রোটিনের মাত্রা কমায়। এই উপাদান ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ আর ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ের জন্য দায়ী।
পাশাপাশি মাছ মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা ধরে রাখতেও উপকারী। সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার চর্বিযুক্ত মাছ খেতে হবে।
প্রতিবারে খেতে হবে তিন আউন্স বা এক কাপের চারভাগের তিনভাগ। খেয়াল রাখতে হবে ‘মার্কারি’ কম এমন মাছ বেছে নেওয়ার দিকে। স্যামন, তেলাপিয়া, সার্ডিনস ইত্যাদি মাছ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ডার্ক চকলেট
পার্টেল জানান, “‘ফ্লাভানয়েড’ নামক ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ‘ডার্ক চকলেট’য়ে।
২০১৭ সালে ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত এক ‘সাইন্টিফিক রিভিউ’ অনুযায়ী, এই উপাদান মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও ভূমিকা আছে।
৭০ শতাংশ কোকো আছে এমন ডার্ক চকলেট বেছে নিতে হবে। বাড়তি কোনো চিনি যোগ করা হয়েছে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, অন্যথায় বাড়বে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
চা
পার্টেল বলেন, “গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তবে সব চায়েই মেলে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
“চায়ে থাকে ‘এল-থিয়ানিন’ নামক এক ‘অ্যামিনো অ্যাসিড’ যা মনযোগ ও ক্ষীপ্রতা বাড়ায়। চা প্রতিদিনই দুতিন কাপ পান করা হয় আর এটাই যথেষ্ট। এর বেশি চা পান করা ক্ষতিকর হতে পারে,” বলেন পার্টেল।
আরও পড়ুনঃ চুল পড়া কমাতে চাল ধোয়া পানির ব্যাবহার।