ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস । বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে (১৭ এপ্রিল) কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।
প্রিয় স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এদিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আ¤্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর নামকরণ করা হয়।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হিং¯্র পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে ওবায়দুল কাদের দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদহোসেন ও মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদচৌধুরী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমসহ অন্যান্যরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসমূহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে মেহেরপুর থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর সৃতিসৌধের পাদদেশে শেখ হাসিনা মঞ্চের পাশে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের সূচনা করা হয়েছে। সূর্যদ্বয়ের সাথে সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ১ মিনিট নিরাবতা পালন ও দোয়া করা হয়।এরপরই পুলিশ, বিজিবি, আনসার, মুক্তিযোদ্ধা, ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউট, গালসগাইডসহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সম্বন্বয়ে গার্ড অব অনার ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হয়।
পরে মুজিবনগরে স্থাপিত শেখ হাসিনা মঞ্চে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অন্যান্যের মাঝে বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এদিকে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও ‘সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। সভায় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো: মকবুল হোসেন সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া সভায় অংশ নেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন বিধায় তিনি শপথ নিতে পারেননি, তাঁর নেতৃত্বেই গঠিত সরকার ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে শপথ নিয়েছিলো। বাংলাদেশের প্রথম সরকার এই মুজিবনগর সরকারের অধিনেই পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এই সরকারের অধিনেই মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো।’
আরো পড়ুন: র্যাগ ডে’র নামে অশ্লিলতা বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের