হোম ধর্ম ও জীবন তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল

তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল

তাহাজ্জুদ নামাজ

রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। আখেরাতের সদাই করার শ্রেষ্ঠ সময় রমজান। তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোই মুমিনের কাজ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা রোযা রাখি, তারাবি নামাজ আদায় করি, সেহরি ও ইফতার করে থাকি। এর পাশাপাশি তাহাজ্জুদ নামাজেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করুন, ইহা আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে— মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা ইসরা : আয়াত ৭৯)

ইবাদতের জন্য দিনের তুলনায় রাত উত্তম। আর রমজান মাসে স্বাভাবিকভাবেই রোজাদার ব্যক্তিদের রাত্রি জাগরণ করতে হয়। তাছাড়া শবে কদরসহ বছরের বিশেষ রাতগুলোতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। আর তাহাজ্জুদের সময়ে প্রতি রাতেই আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের আরজি-আকুতি ও আবেদন-নিবেদন শোনেন। তাই তাহাজ্জুদ নামাজ হলো মহান রবের কাছে নিজের আকুতি পেশ করার মোক্ষম সময়। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিরাতেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন। (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা) তাহাজ্জুদ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মোক্ষম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফরজ নামাজগুলোর পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম)

ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ) । রমজান মাসে কেউ যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন তাহলে তার আমলের এই ধারা অন্য মাসেও বলবৎ থাকবে ইনশাআল্লাহ। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অনেক ভালো।

আমাদের উচিত নিজে ইবাদত করার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব, আপনজন ও নিকটস্থদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে ইবাদতে শামিল করার চেষ্টা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবংসে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন । অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুত) পালন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশা নিয়ে রমজান মাসে কিয়াম করবে (রাতের বেলায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে) তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’

রমজানে এই আমল করা আমাদের জন্য সহজ। কেননা সেহরী খাওয়ার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠি। একটু বেশি সময় নিয়ে উঠলেই আমরা তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করতে পারি। একাকী কিংবা জামায়াতের সঙ্গে কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ নামাজ) মসজিদ বা বাসাবাড়িতে আদায় করা যায়। প্রতিরাতে ১২ রাকাত নামাজ আদায় সম্ভব না হলেও অন্তত ৪ রাকাত বা ৮ রাকাত নামাজ আদায় করার অভ্যাস আমরা করতে পারি।

তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায় করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই নামায আদায় করতে হবে।

আল্লাহ, আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদের পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন..

লেখক : মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান নক্সেবন্দি মোজাদ্দেদী , মদনেরগাঁও দরবার শরীফ

আরো পড়ুন: জামাতে নামায আদায় করার হুকুম ও ফজিলত