২১ মার্চ রাতেই চূড়ান্ত হয় ২৫ মার্চের গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’

একান্ত বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো (ছবি : সংগ্রহ)

ঢাকায় এক রাতের যে অভিযানে অর্ধ লক্ষ মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল, সেই রাতটিকে স্বাধীন বাংলাদেশে বর্ণনা করা হয়কালরাত্রিহিসেবে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম বা কোডনেম দিয়েছিলঅপারেশন সার্চলাইট

 

একাত্তরের ২১ মার্চ ছিলো রোববার। লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর আন্দোলনের গতি আরো বেগবান।

ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালীদের মিছিল, সমাবেশ। দলে দলে সব ছুটছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। বাঙালী বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের বৈঠক ছিল প্রহসন মাত্র।

এই দিন সকালেই বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে পঞ্চম দফা বৈঠক করেন।

এই অভিযানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও এক সপ্তাহ আগে, ২১ই মার্চ।

সময়টা ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় ঢাকা তখন বিক্ষোভের শহর।

ঢাকায় ইতিমধ্যে ওড়ানো হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এরই মধ্যে ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছেন। ডামি রাইফেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় মার্চ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

ঢাকায় তখন চলছে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। আলোচনায় অংশ নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোও রয়েছেন শহরে। সেদিন তার অভ্যর্থনার জন্য এয়ারপোর্টে কয়েকজন আমলা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ভুট্টো ঢাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আন্দোলনরত জনতা তার বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কড়া সামরিক নিরাপত্তায় তিনি হোটেলে পৌঁছেন। ভুট্টোর সঙ্গে ছিলেন ১৩ জন উপদেষ্টা এবং প্রায় একডজন সশস্ত্র দেহরক্ষী। ভুট্টো এ দেশে আসার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর রাজপথে সবাই নেমে আসেন।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুট্টো জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানালে সংগ্রামী জনতা তার প্রতি জুতা নিক্ষেপ করে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। রাতে ভুট্টো ও ইয়াহিয়া দু’ঘণ্টা স্থায়ী এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং ২৫ মার্চের গণহত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করেন।

এরকম প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা অপারেশন সার্চলাইটের, যুক্তি ছিল রাজনৈতিক সমঝোতা ‘ব্যর্থ’ হলে সামরিক অভিযান চালিয়ে ‘পাকিস্তান সরকারের কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

‘কালরাত্রির’ সেই ভয়াবহ সেনা অভিযানের পরিকল্পনা কীভাবে হয় তার ধারণা পাওয়া যায় সেসময় ঢাকায় দায়িত্বরত পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকে।