দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিল বলে জানা গেছে।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। তবে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং ফুসফুস মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। পরবর্তীতে করোনা থেকে সেরে উঠলেও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগেন তিনি।
আবুল হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন।
আশিক চৌধুরীর ফেসবুক পোস্ট থেকে আরও জানা যায়, গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আগে থেকেই ব্লাড ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত এ বিএনপি নেতা।
আশিক চৌধুরী আরও জানান, লন্ডন থেকে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে মন্নু চৌধুরী ফোনে মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন।
প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে মারা গেলেও হারিছ চৌধুরীর পরিবার তার মৃত্যুর খবর গোপন রেখেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী।
বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওয়ান ইলেভেনে পট পরিবর্তনকালীন সময়ে দেশ ছাড়েন হারিছ চৌধুরী। জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির কদিন পরই স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে যান হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই সময় বেশ কয়েকদিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন তিনি।
২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারিতে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে পাড়ি জমান ইরানে থাকা ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে। ইরানে কয়েক বছর থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার। দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হারিছ চৌধুরী ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রক্ত পরিবর্তন করেছিলেন। দেশ ছাড়ার পর যুক্তরাজ্যে আরও একবার তিনি রক্ত পরিবর্তন করেন।
আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও হারিছ চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত: মেডিকেল বোর্ড