ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে বাংলাদেশ বোলিংয়ে গিয়ে শুরুতে ভালোই করেছিল। সঠিক লাইন ও লেন্থ বজায় রেখেই বল করছিলেন পেসাররা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথেই সময় যত গড়িয়েছে তারা তত বিবর্ণ হয়েছেন। সেই সুযোগে প্রথম দিন শেষে ১ উইকেটেই ৩৪৯ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করেছে নিউজিল্যান্ড।
ভাগ্য নির্ধারণের টস জিতে বাংলাদেশ বোলিংয়ে যাবে এটা আগেই নির্ধারিত ছিল। তাই সবুজাভ উইকেটে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি মুমিনুলকে। বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হয়েছে দুই দলের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্টে ফিল্ডিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়া মাহমুদুল হাসান জয় খেলতে না পারায় তার জায়গায় এসেছেন মোহাম্মদ নাঈম। বাংলাদেশের শততম টেস্ট খেলোয়াড় তিনি। এছাড়া শেষ মুহূর্তে গ্রোয়েনের ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন মুশফিকুর রহিম। তার জায়গায় দলে সুযোগ পেয়েছেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। নিউ জিল্যান্ড রাচিন রবিন্দ্রর পরিবর্তে নিয়েছে ডার্ল মিচেলকে।
বাংলাদেশ দলের বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। সেই সাথে রয়েছে ক্যাচ ও রানআউট মিস। এমনকি রিভিউও নেওয়াতেও হতাশ করেছে বাংলাদেশকে। এলোমেলো বোলিংয়ে অনায়েসে রান দিয়েছেন। নূন্যতম সুযোগ তৈরি করতে না পারায় থেকেছেন উইকেটশূন্য।
৩.৮৭ রান রেটে রান তুলেছে স্বাগতিকরা। নিজ মাঠ হ্যাগলি ওভালে লাথাম অপরাজিত আছেন ২৭৮ বলে ১৮৬ রান করে। ১৪৮ বলে ৯৯ রান করেছেন কনওয়ে। অথচ দিনের শুরুর দিকেই এক ওভারে দুই-দুইবার বেঁচে গিয়েছিলেন টম লাথাম। যখন তার রান ছিল মাত্র ১৬। সেই লাথামই দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে।
সেঞ্চুরি করেই দিন শেষ করতে চেয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। অবশেষে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন কনওয়ে। কিউই অধিনায়ক টম লাথাম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৪ রান দূরে। বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে দুজন মিলে করেছে অপরাজিত ২০১ রানের জুটি। এখান থেকেই তারা শুরু করবে দ্বিতীয় দিন।
আরও পড়ুন : টস জিতলে বোলিং নেবে বাংলাদেশ দল
আগেরদিন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, সবুজাভ উইকেট পেস বোলারদের সহায়ক হবে। তাই টস জিতলে বোলিং নেয়ার কথা বলে রেখেছিলেন। কিন্তু বল হাতে বিবর্ণ দিন কাটালেন বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী। তাসকিন, শরিফুল ও ইবাদত কেউই আজ হুমকি হতে পারেননি। নিখুঁত লাইন ও লেন্থ ধরে বোলিং করতে পারেননি। পারেননি আগ্রাসন দেখাতে। আলগা বোলিংয়ে দিয়েছেন প্রচুর রান। তাদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অতি অসহজেই রান তুলেছেন ব্যাটসম্যানরা। সব মিলিয়ে ৪৩টি বাউন্ডারি এসেছে প্রথম দিনই। কনওয়ে দিনের একমাত্র ছক্কাটি হাঁকিয়েছেন।
বাংলাদেশের বাজে বোলিংয়ে দ্রুত রান তুলছে নিউজিল্যান্ড। অনায়েসে রান তুলে দ্বিতীয় সেশনেই ১১০ রান পেয়েছে স্বাগতিকরা। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন টম লাথাম। এছাড়া ইয়ং, কনওয়েও এগিয়েছেন দারুণভাবে।
বাংলাদেশের বোলিংয়ে কোনো ধার নেই। নেই লাইন ও লেন্থ। এলোমেলো বোলিংয়ে বেহিসেবী রান দিচ্ছেন তিন পেসার। দ্বিতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ২৯ ওভার। নিউজিল্যান্ড নিয়েছে ১১০ রান।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৪৮ রানে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন বাংলাদেশী পেসার শরিফুল। ইয়ংকে পয়েন্টে অভিষিক্ত নাঈম শেখের হাতে তালুবন্দি করিয়ে সাজঘরে পাঠান তিনি। ১১৪ বলে ৫৪ রান করে ডানহাতি ওপেনার আউট হন। শরিফুলের লাফিয়ে উঠা পয়েন্ট দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন ইয়ং। টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বল যায় সোজা নাঈমের হাতে।
তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম শুরুর ৮ ওভারে খুব একটা ধারালো ছিলেন না। মুমিনুল নবম ওভারে বোলিংয়ে আনেন প্রথম টেস্টের নায়ক ইবাদতকে। ডানহাতি পেসারের শুরুটা একবারেই হতশ্রী। ডাউন দ্য উইকেট থেকে প্রথম বলই হাফ ভলি। কাট করে বল সীমানায় পাঠান লাথাম। দ্বিতীয় বল আঘাত করে লাথামের থাই প্যাডে। বাংলাদেশ দল জোরালো আবেদন করলে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লাথাম। পঞ্চম বলে আবার একই কাণ্ড। এবারও ইবাদতের আবেদনে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। এবারও বেঁচে গেলেন লাথাম।
বাংলাদেশ একাদশ :
সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, কাজী নুরুল হাসান সোহান, লিটন দাশ, ইয়াসির আলী রাব্বী, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী।
নিউজিল্যান্ড একাদশ :
টম লাথাম, উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, রস টেলর, হেনরি নোকলস, টম ব্লান্ডেল, ডার্ল মিচেল, ম্যাট হেনরি, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট।
আরও খেলার খবর