প্রিয়জনের কাছে থেকে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে কী করবো?

প্রেম আমাদের অনেকের জীবনে আসে, আমার ধারনা মতে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেকাংশ জুড়ে এটির প্রভাব বিস্তার রয়েছে।

প্রেম আমাদের অনেকের জীবনে আসে, আমার ধারনা মতে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেকাংশ জুড়ে এটির প্রভাব বিস্তার রয়েছে।

কিন্তু যখন প্রেমে পছন্দের বান্ধবীর সাড়া না পেয়ে আমরা ভেঙে পরতে আরম্ভ করি, জীবন এখানেই শেষ ভাবি।

  • তখন কি করা উচিৎ,
  • জীবনকে নতুন করে কিভাবে ভাবা উচিৎ,
  • নতুন করে কিভাবে বাঁচতে, ভাবতে এবং ভাবাতে শেখা উচিৎ,
  • কিভাবে এটা কাটিয়ে উঠে জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ,
  • এবং সেই পুরনো বান্ধবীকে কিভাবে বিরক্তি না করে বরং কিভাবে সম্মান দিতে শেখা উচিৎ,
  • পাশাপাশি নিজেকে ছোট না ভাবা উচিৎ,

আসুন সেটার আলাপ করি।জীবনের একটি মুহূর্তে এসে বেশীরভাগ লোকেরাই পুরনো কোন পছন্দের মানুষের কথা ভেবে মনে মনে কষ্ট পান, মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থাকেন শুধুমাত্র পুরনো সেই বান্ধবীকে না পাবার কষ্টে। তখন আপনি ভাবতে আরম্ভ করেন যে আপনার জীবন এখানেই ইতি টেনেছে।

প্রচণ্ড হতাশার এবং হৃদয়ঙ্গমের পোস্টের পরে পোস্টে আপনার সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থার একাউন্টের নিরীহ ওয়াল ভারী হয়ে ওঠে।

আপনি সময়মত খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়ে পছন্দের বান্ধবীর থেকে সাড়া পাবার জন্য নানান উন্মাদনা আরম্ভ করেন।

কখনো হাত কেটে, কখনো নিজের হাতে বান্ধবীর নাম এঁকে, কখনও শুধুমাত্র বান্ধবীকে দেখানোর জন্য আপনি মাতাল হতে আরম্ভ করেন, আপনার নিপুণ ধারনা বান্ধবীর বিরহে আপনার কষ্টে দেখে বান্ধবী প্রেমের আকাঙ্ক্ষায় সাড়া দেবেন।

এমনকি কখনো বান্ধবী স্পষ্ট ভাবে সাড়া না দিয়ে চূড়ান্ত নিবৃত্তি ঘটানোর পরেও আপনি পিছুলাগা আরম্ভ করেন, বান্ধবীকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করা, বান্ধবীকে বোঝাতে চেষ্টা করা আমায় ফিরিয়ে দিয়ে নিবৃত্তি ঘটার পরেও আমি আপনাকে ভালোবাসি, আমি অনন্তকাল আপেক্ষা করবো।

এরপরে হুটহাট করে বান্ধবীর বাসায় একগুচ্ছ ফুল পাঠানো, তার জন্মদিনে মোটা অঙ্কের টাকায় কেক কিনে বন্ধুদের দিয়ে ওনার বাসায় পাঠিয়ে বিশাল হুলস্থুল কাণ্ড ঘটানো। পুরনো সময়ের কিংবা তার কোন স্থির চিত্র আপনার কাছে থাকলে সেটি নিজের ওয়ালে দিয়ে এবং বন্ধুদের দিয়ে সেটি শেয়ার করিয়ে আপনি বোঝাতে চান যে আপনি এখনো ভুলে যেতে পারেননি আপনার বান্ধবীকে।

আপনার ধারনা এসব করলেই বুঝি বান্ধবী মুগ্ধ হয়ে তাদের প্রেমে সাড়া দেবেন, আপনার জীবনে ফিরে আসবে।

এসে বলবেন,

“আপনি সত্যিই দারুণ, আমি আপনাকে পছন্দ করি, ভালবাসি। চলুন আমরা বিয়ে করি।”

বস্তাপঁচা এবং কিছু অতিরিক্ত অখাদ্য কুখাদ্য বাংলা নাটক এবং সিনেমা দেখে হয়তো এটাই আপনার ধারনা, তবে মশাই, আপনি ভুল, প্রচণ্ড রকম ভুল।

  • একবার ভেবেছেন, আপনার এইসব বস্তাপঁচা আবেগকেন্দ্রিক পাগলামো গুলো আপনার প্রেমে সাড়া না দিয়ে নিবৃত্তি ঘটানো মানুষটির উপর সত্যিই কোন ইতিবাচক প্রভাব পরছে নাকি আপনার বান্ধবী অসম্ভব রকম বিরক্তি হচ্ছেন?
  • আপনি কি জানেন, আপনার এসব নিছক আবেগপরায়ণ কর্মকাণ্ড গুলোই আপনার পছন্দের মানুষটির অসম্ভব বিরক্তির একমাত্র কারণ?

এসব পাগলামো করা প্রেম নয়, ভালোবাসার উদাহরণ নয়, বরং এটা বিরক্তিকর, প্রচণ্ড রকমের বিরক্তিকর।

আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না একজন মানুষ যখন আপনাকে সাড়া না দিয়ে নিবৃত্তি ঘটান, তখন এসব পাগলামো গুলো ওনার জন্য কতটা ভয়ংকর রকমের বিরক্তের।

ভেবে দেখুন, এসবের জন্য আপনার উপর ওনার কতটা নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। হয়তো আপনার ভালোবাসা,অনুভূতি এগুলো সত্যি ছিলো। তবে, এটি শুধুমাত্র আপনার ক্ষেত্রেই কাজ করছে এবং আপনার দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ, ওনার জন্য নয়। ওনার জীবনধারা, ফিলসফি আপনার মতন নয়।

এক মুহূর্তের জন্য আপনার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর মানুষটিরকথা কল্পনা করে ভাবুন তো, ওর কোন কাজকর্ম, কথাবার্তা কিংবা আচরণ কি আপনাকে মুগ্ধ করে নাকি আপনার কাছে শুধুমাত্র ন্যাকামো মনে হয়?

আপনার বান্ধবীর কাছেও বর্তমানে আপনার মূল্য ওরকম বিরক্তিকর মানুষের মতই, এরচেয়ে একটুও বেশী না।

জীবনের এরকম মুহূর্ত গুলোতে এসব ইম্যাচিউরিটি এবং পাগলামো না করে বরং একটু মাথা খাঁটান, ম্যাচিউর আচরণ করুন, এটি করা উচিত।

প্রতিটি প্রেমে প্রত্যাখ্যানের পেছনে একটি কারণ রয়েছে, সেটা ি,ি“আমরাসমবয়সীকিংবাআমরাসেরাবন্ধু,তাইআমিএতেআগ্রহীনই” নয় বরং অন্যকিছু।

সেটা খুঁজে বের করুন। নিজের জীবনের প্রতি মনোনিবেশ করুন। নিজেকে গুরুত্ব দিতে আরম্ভ করুন।

বিশ্বাস করুন, প্রেম এবং ভালোবাসা একটি বোঝাপড়া, উপলব্ধি, ব্যক্তি ইচ্ছে, পছন্দ এবং মতের ব্যাপার। এখানে কোন মানুষ বাধ্য নন আপনাকে সাড়া দিতে, যদি না নিতি চান।

ঠিক আপনার মত করেই উনিও অধিকার রাখেন আরেকজন কে পছন্দ করার, আপনাকে সাড়া দিয়ে উনি পছন্দ করতে একদম ই বাধ্য নন।

নিজেকে জীবনের আরও ভাল একটি পর্যায়ে নিয়ে আসুন। নিজেকে নিখুঁত করুন। আমর প্রায় সকলেই আমাদের জন্য আমাদের চেয়ে নিখুঁত ব্যক্তি খুঁজি, এটি দোষ নয়, বরং একটি মৌলিক অধিকার।

নিজেকে জীবনের আরও ভালো একটি পর্যায়ে নিয়ে এরপরে মানুষটির সামনে দাঁড়ান, যদি আপনি তখনো ওনাকেই পছন্দ করে থাকেন। উঠে দাঁড়ান এবং ওনার কাছে এখন নিজের ভালোবাসা উপস্থাপন করুন।

এতে আগের চেয়ে আপনার প্রত্যাখ্যাত হবার সম্ভাবনা কম।

কারণ প্রতিটি মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী বিরতি প্রয়োজন, নিজেকে ঠিক করার জন্য, নিজেকে ভেঙে আবার তৈরির জন্য। আমাদের জীবন ছোট, আমরা কেউ নিখুঁত নই, এটি অপরাধ নয়।

তবে, এটি সব সময়ে ঘটবে এমন নয়। দেখুন, কিছু ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের মানুষটির জীবনধারা আপনার মতন নয়, কিংবা আপনার জীবনধারা ওনার মতন নয়।

এটা দিয়ে কারোর জীবনধারাকে কারোরটার থেকে ভালো অথবা খারাপ বলা চলে না, এ কখনো তুলনার মতন বিষয় ই নয়, বরং এটি একটি ব্যক্তি পছন্দ। এরকম মুহূর্তে নিজের মতন বাঁচা, নিজের মতন মানুষ খুঁজে নেওয়া টা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

দেখুন, সবার ক্ষেত্রেই এমন টা হবেনা যে একজন মানুষ আপনারা পাশে সবসময়ে দাঁড়িয়ে শুধু আপনাকেই সাহস দেবে, উৎসাহ দেবে। জীবনের অনেক গুলো মুহূর্তে আপনাকেই নিজেকে সামলাতে শিখতে হবে।

রঙিন কাঠের চশমায় পৃথিবী দেখার বদলে বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে হবে। এটা সত্যি, এটা মেনে নেওয়া কিংবা না মেনে নেওয়ায় কিছুই আসে যায়না, এটা বদলে যায়না।

তবে রঙিন চশমা চোখে দিয়ে বসে থেকে পৃথিবী দেখে নিজেকে আগের চেয়ে ভালো পর্যায়ে না এনে কপাল কে দোষ দেওয়া টা অপরাধ, ভুল সিদ্ধান্ত।

আপনি যখন নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেকে বদলে একটি ম্যাচিউর জীবনধারায় চলে আসবেন, তখন মানুষটির ভেতরে আপনার জন্য মায়া জম্মাতেও পারে, তিলেতিলে আপনার প্রতি অনুভূতি হতেও পারে, যদি আপনি এখনো এটা চান।

আমাদের সবার উচিৎ পরিস্থিতি সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াতে শেখা। শিরদাঁড়া ভেঙে বসে পরলে ওতে ওনার কিছুই হবেনা।

জীবনে এরকম ধাক্কা সবার খাওয়া উচিৎ। নিজের জীবনধারা গড়ুন, নিজেকে ভালো একটি পর্যায়ে নিয়ে আসুন। পাগলামো বাদ দিন, ওসব আপনার কাছেই সত্যি এবংপ্রেমের উদাহরণ। আপনার প্রেয়সী’র কাছে নিছক ছাগলামোর সমতুল্য।

শুধুমাত্র একটি অনুভূতির কাছে নিজেকে হেরে যেতে দিবেন না।

নিজের যত্ন নিন, নিরপেক্ষ হতে শিখুন, নিজেকে সর্বদা বুঝতে শিখুন। পৃথিবী কে জানুন, নিজেকে জানুন, এরপরে মানুষটির সামনে আসুন। তাকে জানুন, বুঝুন। জীবন সুন্দর। এই উপলব্ধি শিখতে পারলে আপনার জীবনে বড় প্রভাব পরবে। ভালো থাকুন।

ছবি – ইন্টারনেট।

তন্ময় জাবের