হোম ফিচার বিনোদন ২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম

২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম

করোনায় ২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম

২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম তার হিসেব মেলানোর পাশাপাশি প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে নতুন বর্ষকে বরণেরও। প্রতি বছর স্বাভাবিকভাবে এই তালিকা তৈরী হলেও গত বছর দুই ধরে তালিকার সাথে নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে করোনা নামক মহাব্যধির।

করোনার কঠিন ও নির্দয় থাবায় বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেও গত হয়েছেন দেশ বরেণ্য বহু বিশিষ্টজন।

ফিরে দেখি ২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম :

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ উদযাপনে জাতীয় ও সাংগঠনিকভাবে নানা কর্মসূচীর পরিকল্পনা থাকলেও  করোনার বিষে দিশেহারা বিশ্বের সাথে আমাদেরকেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে নানা উৎসব উদযাপনে। মহামারি করোনার ঢেউয়ে কেবল জনজীবনই নয়, বিপর্যস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতিও। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উৎসবমুখর পরিবেশেও লাগাম টেনেছে করোনা। এ অদৃশ্য শক্তির কালো অন্ধকারে হারিয়ে গেছে দেশবরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংগীত ও অভিনয়শিল্পীসহ নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের জীবনপ্রদীপ। আবার অনেকেই বরণ করেছেন স্বাভাবিক মৃত্যু।

২০২১ এ সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের হারালাম সেইসব প্রথিতযশা মানুষদের মধ্যে যারা আছেন :

রফিকুল ইসলাম :

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ফুসফুসের জটিলতায় ভুগে গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে।

রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

২০১২ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কারসহ নানা সম্মানে ভূষিত হন রফিকুল ইসলাম।

সৈয়দ আবুল মকসুদ :

২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

আবুল মকসুদ গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৪০টিরও বেশি।

১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। একাত্তরে মুক্তযুদ্ধকালে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায়।

বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।

রাবেয়া খাতুন :

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশি বিশিষ্ট লেখিকা রাবেয়া খাতুন মারা যান। বেশ কিছুদিন বাধ্যর্কজনিত রোগে ভুগে বনানীতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে নানা বাড়িতে রাবেয়া খাতুন জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম নক্ষত্র রাবেয়া খাতুনের পৈত্রিক ভিটা  মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে৷

তাঁর স্বামী সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক এটিএম ফজলুল হক। তাদের চার সন্তান সন্তান ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।

রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র মেঘের পরে মেঘ।

স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত রাবেয়া খাতুন লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার সাথেও্ যুক্ত ছিলেন।

হাসান আজিজুল হক :

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গত ১৫ নভেম্বর মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে রাজশাহীর বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখি করে গেছেন। তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন।

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানেই কর্মজীবনের ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন

মুশতারী শফী :

একাত্তরের রণাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুশতারী শফীর জন্ম। তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে। একাত্তরের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার স্বামী মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানকে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি চট্টগ্রামে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে এই শহীদজায়া। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকায় ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘রোকেয়া পদক’ পান তিনি।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ :

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন চলতি বছরের (২০২১) ২৫ ডিসেম্বর। সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’ এবং ‘দ্য নিউজ টুডে’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি চারবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। গত ২১ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতায় গৌরবময় অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

ফজল-এ-খোদা :

গত ৪ জুলাই ভোরে মারা যান গীতিকার ফজল-এ-খোদা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনা জেলার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার ছিলেন। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছে ফজল-এ-খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি।

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গান সহ অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত এবং ইসলামিক গানের রচয়িতা ছিলেন তিনি।

এছাড়া তার লেখা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী, ‘বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’ প্রভৃতি।

বুলবুল চৌধুরী :

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত ২৮ আগস্ট কথাসাহিত্যিক ও লেখক বুলবুল চৌধুরী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

গাজীপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারী বুলবুল চৌধুরী লেখালেখি ছাড়াও সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দৈনিক সমকাল ছাড়াও তিনি বিভিন্ন দৈনিকে কাজ করেছেন।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।

ফকির আলমগীর :

২০২১ সালের ২৩ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলাদেশের প্রখ্যাত গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। গণসঙ্গীত ও দেশীয় পপ সঙ্গীতে ফকির আলমগীরের ব্যাপক অবদান রয়েছে।

প্রখ্যাত গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে শিল্পী একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

ফরিদ আহমেদ :

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে মারা যান দেশের গুণী সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১১ এপ্রিল থেকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বরেণ্য এই সুরকার। তারও আগে মার্চের শেষ সপ্তাহে সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হন ফরিদ আহমেদ। অবস্থার খানিক অবনতি হলে ২৫ মার্চ রাতে তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফরিদ আহমেদের করা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘ইত্যাদি’র টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি’, ক্ষুদে গান রাজ’র ‘থিম সং’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’র থিম সং, সেরা কণ্ঠ’র থিম সং প্রভৃতি। অনেক নাটক, টেলিফিল্ম সিনেমার জন্য গান বানিয়েও সফল হয়েছেন ফরিদ আহমেদ।

সারাহ বেগম কবরী :

ঢাকাই সিনেমার খ্যাতিমান অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী চলতি বছরের (২০২১) ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। আক্রান্তের ১৩ দিনের মাথায় বিদায় নেন তিনি।

৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। গত ৫ এপ্রিল দুপুরে করোনা আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। সেদিন রাতেই কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাবেক সাংসদ কবরী। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তার আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সবশেষে সিনেমায়। কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের মা।

মিতা হক :

২০২০ এর ২৫ মার্চ মিতা হকের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কয়েকদিন বাসায় আইসোলেশনে থেকে চলতি বছরের (২০২১) ৩১ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১ এপ্রিল ভোরে মারা গেছেন বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। তিনি কিডনি রোগী ছিলেন। গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত ডায়লাইসিস নিয়ে ভালোই ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পান বিশিষ্ট এই রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।

সংগীতশিল্পী মিতা হক অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। মেয়ে জয়ীতাও রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। এছাড়া মিতা হক বিভিন্ন সময়ে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন, ছায়ানটসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এস এম মহসীন :

করোনায় মারা গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতা এস এম মহসীন। তিনি মারা যান চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে।

চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয় করছেন এস এম মহসীন। অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্য বিভাগ অনুষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় থিয়েটারের প্রথম প্রকল্প পরিচালক হিসাবে যুক্ত ছিলেন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী এস এম মহসীন।

এ টি এম শামসুজ্জামান :

আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান (এটিএম শামসুজ্জামান) পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে চলতি বছরের (২০২১) ২০ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

একজন অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার।

৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এবং শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

ওয়াসিম :

শনিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন।

কয়েকদিন আগে অসুস্থ হওয়ার পর ওয়াসিমকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি হলে সেখান থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে শনিবার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল।

গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রথম ও বনানীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

শাহীন আলম :

চলতি বছরের (২০২১) ৮ মার্চ মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীনূর আলম শাহীন (শাহীন আলম)। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।

মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ির পর ১৯৮৬ সালের এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে চলচ্চিত্রে ডাক পান। ১৯৯১ সালে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মায়ের কান্না’। প্রায় দেড়শ ছবিতে অভিনয় করা শাহীন আলম শেষজীবনে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

আরও পড়ুন : এসএসসির ফল প্রকাশ আজ, জানা যাবে যেভাবে