রুনু ভেরোনিক ডি কস্তা ছিলেন দেশের প্রথম করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাগ্রহীতা। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি তিনি প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানোর পর বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে বুস্টার ডোজ গ্রহণ। এক্ষেত্রেও রুনু ভেরোনিক ডি কস্তা সবার আগেই বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন।
রুনু বর্তমানে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কাজ করছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে । বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারীর সময়টাতে যখন বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষ নিজেদেরকে নিরাপদ জায়গায় গুটিয়ে নিয়েছেন তখন চিকিৎসকের পাশাপাশি রুনু ভেরোনিক ডি কস্তা ও তার মতো নার্সরাই নিরলস সেবা ও নিজেদের জীবনের ঝুঁকিতে রোগীর সেবা করেছেন।
এমনকী দেশে টিকা গ্রহণের প্রথম সময়টাতে মানুষ দ্বিধাগ্রস্থ ছিল টিকা গ্রহণে। সেই ভয় ও নানা জনের বাধা উপেক্ষা করে বীরদর্পে এগিয়ে এলেন রুনু।
টিকা গ্রহণ বিষয়ে রুনু বললেন, ‘করোনার কথা শুনে সবার মতো আমিও ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর মনে হলো, নার্সিং পেশায় যখন এসেছি তখন রোগীর সেবা করতেই হবে, যে রোগের রোগীই হোক না কেন। এই দুর্দিনে পিছিয়ে আসার অপশন নেই।’
রুনু ভেরোনিক ডি কস্তা আরো বলেন, ‘শুরুর দিকে পরিবার রেখে হাসপাতালে কাজ করার সময় আমাদের হোটেলে রাখা হতো। তখনতো ছেলে-মেয়ে-স্বামী-সংসার সব রেখে আসতাম ও সব বাধা, ভয় কাটিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করতাম। পরিবারের মানুষগুলো তখন একটা ফোন পেলেও ভয় পেত—না জানি আমাকে নিয়ে আবার কী সংবাদ তারা পায়। কিন্তু সুস্থ ছিলাম, ভয়কে জয় করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম।’
টিকা বিষয়ে নানা নেতিবাচক প্রচারণার পরেও কিভাবে টিকা নিতে এগিয়ে আসলেন প্রশ্নের জবাবে রুনু ভেরোনিক ডি কস্তা জানান, ‘গাজীপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকাকালীন হাসপাতাল থেকে ফোন করে নার্সিং সুপারভাইজার টিকা নেয়ার বিষয়ে আমার কাছে জানতে চান। একই সাথে নার্সিং সুপারভাইজার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছা পোষণ করছেন নার্সদের কাউকে দিয়ে এই টিকার উদ্বোধন করাতে।
কুর্মিটোলা হাসপাতালে তখন ৪০০ নার্স কাজ করছেন। তাদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যেই ২৫০ জনকে সুপারভাইজার ফোন করেছিলেন। কেউই রাজি ছিলেন না। কিন্তু আমি কিছুটা সময় চেয়ে নিলাম পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য। কিন্তু আমার স্বামী অমত করেননি। তারপর আমি নার্সিং সুপারভাইজারকে কনফার্ম করি। তবে আমি তখনও জানতাম না আমি ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কেউ রাজি হননি।
রুনু আরও বলেন, আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২৬ জানুয়ারি আমাকে কনফার্ম করা হয়। পর দিন (২৭ জানুয়ারি) টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। আমাকেই প্রথম টিকা দেওয়া হবে। এতে আমার কোনও দ্বিমত রয়েছে কিনা প্রশ্নও করা হয়। তবে আমি পিছিয়ে আসিনি এবং টিকা গ্রহণে আমার মধ্যে কোন ভয়ও কাজ করেনি। তারই ধারাবাহিকতায় বুস্টার ডোজের প্রথম ডোজও আমাকে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : > ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন