চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এল.এ) শাখা থেকে জালিয়তির মাধ্যমে কর্ণফুলী থানাধীন ডাঙ্গারচর মৌজার এসপিএম প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ৭৬ শতক ভূমির ক্ষতিপূরণের ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক উত্তোলনের চেষ্টাকারী ও সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেটের মূল হোতা জোহুরা বেগম (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর রোববার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আটককৃত জোহুরা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা সদরের ওসমানের মেয়ে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত জোহুরা মুলত একটি রেজিস্টার্ড পাওয়ার অফ এটর্নী মূলে কর্ণফুলী থানাধীন (সাবেক বন্দর) ডাঙ্গারচর মৌজার এসপিএম প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত দুই দাগে মোট ৭৬ শতক ভূমির ক্ষতিপূরণের মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক উত্তোলন করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এল.এ) শাখায় আবেদন করেন। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার দাতাদের পরিচয় ও তার সাথে উক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন উত্তর দেন এবং পাওয়ার অফ এটর্নী দাতাদের তিনি চেনেন না বলে জানান। তার স্বামী মূলত তার পক্ষে পাওয়ার অফ এটর্নী দলিল সম্পাদন করেছেন। তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দালাল জোহুরা বলেন, তার স্বামী প্রবাসী। দু’মাস যাবত তার সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ নেই। তখন জোহুরা সম্পর্কে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের নির্দেশে একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত¡াবধানে লোক মারফত পাওয়ার দাতাদের ঠিকানায় অনুসন্ধান করা হয়। পাওয়ার অফ এটর্নী দলিলে বর্ণিত ঠিকানায় আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উভয়ের পিতা হাজী আব্দুস সাত্তার, নামীয় দুই জন লোকের সন্ধান পাওয়া যায়।
আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল উভয়েই জানায়, তারা জোহুরাকে নয়, কাউকেই তাদের জমির ক্ষতিপূরণ উত্তোলনের জন্য কোন প্রকার ক্ষমতা অর্পণ করেননি। অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য তাদেরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। পাওয়ার অফ এটর্নী দলিলটি দেখে তারা বলেন, দলিলে তাদের নামের বিপরীতে যে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেয়া হয়েছে সে নম্বর দুটি তাদের পরিচয়পত্রের নম্বর নয় এবং জোহুরা কর্তৃক সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক লিখিত আপত্তি দাখিল করেন। জেলা প্রশাসনের নিকট তৎক্ষণাৎ এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, ক্ষতিপূরণের আবেদনকারী জোহুরা একটি প্রতারক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। ভূয়া লোকদেরকে আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাজিয়ে এ প্রতারক সিন্ডিকেট পাওয়ার অফ এটর্নী দলিলটি সদর সাবরেজিস্ট্রার, চট্টগ্রামের অফিসে রেজিস্ট্রি করে এবং সে দলিল মূলে ক্ষতিপূরণের আবেদন করে। তার এরূপ প্রতারণামূলক কর্মকান্ড উদঘাটিত হলে জেলা প্রশাসন দ্রæততার সাথে সিএমপি’র কোতয়ালী থানায় এজাহার দায়ের করেন। থানায় মামলা রুজুর পর আসামী জোহুরাকে গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ। গত ৭ নভেম্বর রোববার কক্সবাজার থেকে প্রতারক জোহুরা আটক হয়।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে , প্রতারক সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রতারণার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত কঠোর। এ প্রতারণার সঙ্গে যেই যুক্ত থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না,সকলকেই বিচারের আওতায় আনা হবে। ইতোপূর্বেও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ৪ জনকে আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা এ মুহুর্তে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সুনামের সাথে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। সচ্ছতার এ ধারাবাহিকতা বিনষ্টের জন্য বিভিন্ন সিন্ডিকেট অপতৎপরতা চালানোর অপচেষ্টায় করছে। সিন্ডিকেট বা দালাল চক্র যত ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের এই অপচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য জেলা প্রশাসনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।