প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তাকে ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আর সেই চেষ্টা করে কেউ সফল হতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের দ্য ক্লারিজ হোটেলে সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুজিব ও পরিচিতি বই দুটির ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু বলতে চাই, এই ডকুমেন্টটা হচ্ছে একটা পাবলিকেশন, যেটা কখনো কেউ করেনি। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা অনুমতি দিয়েছি এবং উদ্যোগ নিয়েছি এই ডকুমেন্টগুলো প্রকাশ করার। আমি মনে করি এটা অনন্য।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংকলিত সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বইটির প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। এ গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ ছেপেছে ব্রিটিশ প্রকাশনা সংস্থা টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস।
বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে এর সাত খন্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। বইটি প্রকাশের জন্য দীর্ঘ ২০ বছর কাজ করতে হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করি এবং ২০০৯ সালে এটা প্রকাশের উদ্যোগ নিই। ২০১৭ সালে আমরা এটা প্রকাশ করা শুরু করি। আমার মনে হয় পৃথিবীর কোনো দেশে পাবেন না যে একজন নেতার বিরুদ্ধে তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কী রিপোর্ট দিয়েছে সেটা কোনোদিন কেউ প্রকাশ করবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে। এটা কোথাও হয় না।
অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি কেন বইটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারও ব্যাখ্যা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার বাবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ ব্যান্ড, তার ফটো ব্যান্ড, উনার বক্তৃতা ব্যান্ড। এমনকি যে স্লোগান দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা, সেটাও ব্যান্ড বাংলাদেশে। পঁচাত্তরের পর এটাই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা। তারা সবকিছু ব্যান্ড করেছিল। যখন এই বইটা বের হলো, এরপর থেকে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারল। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা অন্তত বলতে পারি, এটা বের হওয়ার পর থেকে আর কেউ ইতিহাস বিকৃত করতে পারেনি, করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এখন ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারের অংশ। এটা পৃথিবীর ‘অন্যতম অনুপ্রেরণাদানকারী ভাষণ’ হিসেবে বিবেচিত। অথচ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এই ভাষণ শোনা নিষিদ্ধ ছিল। বইটি প্রকাশের জন্য টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাকে বলেছেন এটার ভিতরে এমন কিছু তারা পেয়েছেন যেটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, সারা বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ বইটি পড়বে, এটি নিয়ে গবেষণা করবে এবং অনেক কিছু শিখবে। তথ্য সংগ্রহ করবে। তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। শুধু বাঙালি জাতি নয়, সারা বিশ্বের মানুষ। এটা সত্যিই অসাধারণ।
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনা তার মা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কথাও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন। তিনি বলেন, ‘উনার (বঙ্গবন্ধুর) জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলে। আমরা সন্তান হিসেবে সব সময় বঞ্চিত। আমরা কতটুকু আর বাবার স্নেহ পেয়েছি। কারণ উনি যখন বাইরে, তখন মানুষের জন্য কাজ করছেন, আর তারপরে জেলখানায়। আমাদের সঙ্গে মাসের ১৫ দিনে এক দিনই দেখা হতো। এই ছিল আমাদের জীবন। আমার আব্বা যখন জেলে থাকতেন, আমার মা কাজ করতেন। তবে আমার মায়ের ব্যাপারে বলব, উনি সত্যিকারের গেরিলা ছিলেন। উনার কোনো কর্মকান্ড গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি।
লন্ডন সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেন শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনীও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ছোট বোন ও মেয়েকে নিয়ে পুরো প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।