হোম ফিচার স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল খাবারের অপচয় আটকাতে কি করবেন

খাবারের অপচয় আটকাতে কি করবেন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিমুহূর্তে বাঁচার জন্য যেমন অক্সিজেনের দরকার পড়ে,তেমনি জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আরেকটি বড় উপাদান হচ্ছে খাবার।
তবে সময়ের পরিবর্তনে সমাজের পরিবর্তন হয়েছে আর তার সাথে পরিবর্তন এসেছে খাবারে।

দেশি বিদেশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের দৌলতে যেমন নানা রকমের খাবারের স্বাদ আমরা পেয়েছি, ঠিক সেই ভাবে খাবারের অপচয়ও দিন দিন বাড়ছে।
আজকাল এই খাবার অপচয়ের হার অনেক বেশী। খাবার অপচয় বা খাবার নষ্ট করা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

*খাবার অপচয় কাকে বলে ?
সাধারণত খাদ্য অপচয় বলতে যেটা বুঝি সেটা হলো অভুক্ত খাদ্যকে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার ঘটনা।
অর্থাৎ যে খাবার আমরা খেতে পারিনা, যা অতিরিক্ত পরিমানে বেচে  যায় এই খাবারকে ফেলে দেওয়া বা নষ্ট করাকে খাবারের অপচয় হিসাবে ধরা হয়।

*খাবার অপচয় বন্ধ করুন:
কিন্তু এই খাবার নষ্ট করা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও খাবার নষ্ট হয়।
আবার অনেক সময় আমাদের মানসিকতাও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী।
যেমন রাতে একটু ভাত বেঁচে গেছে কেউ খাবে না তাই তা আমরা পরের দিন সেই বাসি ভাত ফেলে দিই।
অনেক সময় ফ্রিজে কিছু খাবার কয়েকদিন ধরে পড়ে থাকে, সেই খাবার খেতে একটু অন্যরকম হয়ে যায়।
তাই কিছু না ভেবেই সেই খাবার ছুড়ে ফেলে দেই ডাস্টবিনে। এই ভাবেই আমাদের হাত দিয়ে খাবার অপচয় হয়।

*খাবার অপচয় করা উচিত নয় কেন ?
শুধুমাত্র গরিব লোকেরা খাবার পাচ্ছে না এই ভেবে খাবার অপচয় রোধ করতে হবে, এই ধারণাটা একেবারেই ভুল।
আপনি হয়তো জানেন না যে প্রতিদিন আমরা যতটা পরিমান খাবার কিনি বা তৈরি করি তার প্রায় ১৪% খাবারই অপচয় বা নষ্ট হয়।
শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যে পরিমান গ্রীন হাউস গ্যাস (মিথেন) নির্গত হয়, তার প্রায় ৮-১০ শতাংশ পঁচে যাওয়া খাবার থেকে তৈরী হয়।
এই মিথেন গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে প্রায় ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকারক।
একবার ভেবে দেখুনতো এগুলো কি অপচয় না?
এখানেই শেষ  নয় জাতি সংঘের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রায় ৮০ কোটিরও বেশি লোক মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায় অপুষ্টি জনিত কারণে এবং খিদের কষ্টে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শিশু রয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, প্রতিবছর নতুন করে আরো ১০ কোটি লোক খাদ্য কেনার সামর্থ্য থেকে বঞ্চিত হয়।
অথচ পৃথিবীতে যে পরিমাণ খাবারের উৎপাদন হয়,সেই খাবার সবাই খাওয়ার পরেও খাদ্য বেঁচে যাওয়ার কথা।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে প্রতিদিনই নতুন করে বহু লোক ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে খাবার কিনতে না পারার জন্য।
জমিতে ফসল ফলানো থেকে খাবার কেনা পর্যন্ত প্রচুর মানুষ জড়িত।
এতে তারা তাদের অর্থ দেন, পরিশ্রম দেন, সময় দেন, আবেগ দেন।
খাবার অপচয় শুধু খাবারের অপচয় না, একই সাথে অর্থ,পরিশ্রম,সময় ও শক্তিরও অপচয় হয়।
নিজের খাবার নষ্ট করা মানে নিজের কষ্টার্জিত টাকারই অপচয়। তাই আজ থেকেই খাবার অপচয় বন্ধ করুন।

*খাবারের অপচয় আটকাতে:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগ-জীবানুতে নষ্ট হওয়া কিংবা পরিবহনের সময় নষ্ট হওয়া খাবারের ব্যাপারে আমরা ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি কিছু করতে পারি না বা আমরা ব্যাক্তিগত ভাবে এর জন্য খুব একটা দায়ী না।
এর পরেও কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত জীবনে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে খাবারের অপচয় করে থাকি।
এখানেই আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি খাবারের অপচয়।
পৃথিবীতে কোন কিছুই ফেলনা নয়, বিশেষ করে খাবারের মতো মূল্যবান জিনিস।
চাইলে বেচে যাওয়া খাবার দিয়েই বুদ্ধি করে অনেক কিছুই নতুন করে বানিয়ে ফেলা যায়।
বেঁচে যাওয়া খাবার বা নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার এমন ভাবে ব্যবহার করা যায় যা অপচয়ও হয়না আবার সুন্দর করে কাজে লাগানো যায়।