যাদের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ে তাদের শাস্তি দিন:প্রধানমন্ত্রী

অবসরে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে গাফিলতির শাস্তি থেকে রেহাই পাবেন না কোনো কর্মকর্তা এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন তিনি। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হয়ে ঢাকায় বসে থাকেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সহ্য করবেন না। আপনারা সরকারের বিধি-বিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। কারো স্বার্থে, বাড়ির পাশে সেতু নয়, সাইড সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ব্রিজ, সেতু নির্মাণের সময় নদীর যাতে গতি রোধ না হয়, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, সংশোধনের সময় দু-একটি আইটেম নতুন আসে, যার জন্য ব্যয় বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো যখন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন, এসব বিষয় কি দেখে দেননি?

আপনারা প্রকল্পের সাইটে যাননি? নাহলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন? এটা কেন আগে এলো না? এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন নয়, আমারও প্রশ্ন; আপনাদেরও প্রশ্ন।

তিনি আরো বলেন, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধন করতে গিয়ে দাম বেড়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন চলে এসেছে; যা মূল প্রকল্পের ডিজাইনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো, কারা ডিজাইন করেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অর্ডার দিয়েছেন—সংশ্লিষ্ট সকলকে চিহ্নিত করুন; কাদের গাফিলতির জন্য আমাদের প্রকল্পের ডিজাইনটা ইনকারেক্ট (ভুল) হলো, আমাদের সময় ও অর্থ অপচয় হলো। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আইনানুগ, বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যাতে এমন না হয়, সে বিষয়ে সকলের প্রতি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন যে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে যান।

ছয় হাজার ৫৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে চারটি নতুন প্রকল্প ও পাঁচটি সংশোধিত প্রকল্প।

এদিন সকাল ১০টা থেকে একনেকের বৈঠক শুরু হয়। অন্যদিকে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

৯ প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়নে তিন হাজার ৭৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব ঋণ ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ও বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৭৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া ৯টি প্রকল্পগুলো হলো-
১। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেজ-৩) (প্রথম সংশোধিত)।
২। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ (প্রথম সংশোধিত)।
৩। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, কুষ্টিয়া (দ্বিতীয় সংশোধিত)।
৪। জগন্নাথপুর ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় দুটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) স্থাপন।
৫। টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালীপাড়া-কালামপুর বাসস্ট্যান্ড সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ।
৬। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ, ছোট নদী, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন।
৭। শরীয়তপুর জেলার কীর্তিনাশা নদীর ডান ও বাম তীর রক্ষা।
৮। বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন (প্রথম সংশোধিত)।
৯। খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)।