নানা পরিকল্পনার মধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি । বিগত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে রাজধানীর নেতৃত্বকে অনেকে দায়ী করেন। তাই এবার ঢাকা মহানগরের দিকে বেশি মনোযোগ তাদের। এর অংশ হিসাবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি হয়েছে। তারা দলকে আরও শক্তিশালী করতে করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। ইতোমধ্যে থানা-ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী দিনে মহানগরের আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে আশপাশের সাংগঠনিক জেলা শাখা পুনর্গঠনেও তোড়জোড় চলছে।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঢেলে সাজাতে আটটি জোনে ভাগ করেছে বিএনপি। একজন যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম প্রতি জোনের দায়িত্ব পালন করবে। একই প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে মহানগর দক্ষিণ শাখা। এছাড়া দলটির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং গাজীপুর মহানগরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদের অধীনে থাকা ইউনিটগুলোর কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার হটানোর আন্দোলনের জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের রাস্তায় নামতে হবে, সোচ্চার হতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ ভয়াবহ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। তাদের বাধ্য করতে হবে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার জন্য।
বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই মনে করেন, ২০১৩ সালে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি, ২০১৫ সালে তিন মাসের অবরোধ, ২০১৮ সালে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার মুক্তি আন্দোলন-সবকটিতেই ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা মহানগর কমিটি। তৃণমূল নেতাদেরও অভিযোগ ছিল, বিগত দিনে সব জেলায় আন্দোলন কর্মসূচি সফলভাবে পালন করলেও ঢাকা মহানগরের কারণে পুরোপুরি বিজয় ঘরে আনা যায়নি। পরে কর্মসূচিতে গতি ফিরবে ভেবে মহানগরকে দুই ভাগ করা হলেও আশানুরূপ ফল হয়নি। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ঢাকা মহানগরের দিকে এবার বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন নেতাদের সমন্বয়ে সম্প্রতি মহানগরের কমিটি হয়েছে। যেখানে তরুণ নেতাদের বেশি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর কমিটিও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এছাড়া মহানগরকে চার ভাগ করে ছাত্রদলেরও কমিটি হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, বিএনপি যে একটি তৃণমূলের দল সেই মেসেজটা আমরা দিতে চাই। তৃণমূল থেকে যারা দলকে ভালোবাসেন, যারা জিয়া পরিবারের প্রতি অনুগত-এ ধরনের নেতৃত্ব আনতে চাই। এটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে যখন যোগ্য ও ত্যাগীরা আসবেন, তখন তৃণমূল আরও চাঙা হবে। তাহলেই আমাদের যে লক্ষ্য, তা পূরণে আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামতে পারব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, এখানেও শিগগিরই জোনে ভাগ করে টিম গঠিত হবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে চাই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঢেলে সাজাতে আটটি জোনে ভাগ করে নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ কমিটির প্রায় সব নেতা অংশ নেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমে প্রতিটি টিম ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে নেতাকর্মীদের মনোভাব, সংগঠনের অবস্থা ও কাদের নেতৃত্বে আসা উচিত সব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হবে। তবে কোনো নেতা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। প্রতিটি কমিটিতে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া কমিটিতে যেন ১৫ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে টিমপ্রধানদের বলা হয়েছে। কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
ঢাকা উত্তরে আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে জোনপ্রধান করে মিরপুর, কাফরুল, শাহআলী ও দারুসসালাম থানা এলাকার ওয়ার্ড কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া আতিকুল ইসলাম মতিনকে গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট; মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনকে বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা; ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি উত্তরা বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত; মোয়াজ্জেম হোসেন মতি মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর; আতাউর রহমান চেয়ারম্যান উত্তরা পূর্ব, তুরাগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান; আক্তার হোসেন তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও হাতিরঝিল এবং গোলাম মোস্তফা পল্লবী, রূপনগর ও ভাষানটেকের দায়িত্ব পেয়েছেন। জানা গেছে, এসব টিমের কার্যক্রম দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে মনিটরিং করবেন। সার্বিকভাবে টিমের কাজ তদারকি করবেন উত্তরের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব।